মহারাজ—ইন্দ্রিয়ের কর্তা মনকে দমন করতে হবে। আবার মন বুদ্ধি উভয়কেই আত্মাকে লয় করতে হবে। মনকে একদম মেরে না ফেললে চলবে না। সাধুসঙ্গে ইন্দ্রিয়গুলি চুপ মেরে আছে, মনে করো না ও-গুলি আর নেই। সমাধি না হলে ওসব যায় না। একটু ছেড়ে দাও, দেখবে দ্বিগুণ জোরে ইন্দ্রিয়গুলি ছোবল মারবে। সেইজন্য খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন, যতক্ষণ না মন-বুদ্ধির পারে যাচ্ছে।
ভগবান আছেন, ধর্ম আছে—এসব কথার কথা বা morality (নীতি)-রক্ষার জন্য নয়। সত্যই তিনি আছেন, তিনি প্রত্যক্ষের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়। তাঁর চেয়ে সত্য আর কিছু নেই। Fanaticism (গোঁড়ামি) ভাল নয়। ধীর, স্থির, সংযমী হতে হবে।
চার বার ধ্যান করবি—সকালে, স্নানের পর, সন্ধ্যায় ও মধ্যরাত্রে। ভগবানলাভের জন্য ঘর-দোর ছেড়ে এসেছিস, তাঁকে লাভ করবার জন্য একনিষ্ঠ হয়ে প্রাণপণ চেষ্টা চাই। পাগলা কুকুরের মতন ভগবানের জন্যে ‘হন্যে’ হতে হবে। চারটি ভাল ভাত খেয়ে মঠে শুধু পড়ে থাকাmost miserable life (অত্যন্ত হীন জীবন)—না হলো এদিক না হবে ওদিক, এ-কূল ও-কূল দু-কূল গেল! ইতোনষ্টন্ততোভ্রষ্টঃ হবে। মন যদি তাঁতে বসতে না চায়, অভ্যাস রাখতে হবে। রোজ এক অধ্যায় করে গীতা পাঠ দরকার। আমি নিজে দেখেছি মন যখন নিচে নামে, একটু গীতা পাঠ করলে সেগুলো একেবারে যেন ঝেঁটিয়ে সাফ করে দেয়। চারটি ভাল ভাত খেয়ে পড়ে থাকা— ইতোনষ্টস্ততোভ্রষ্টঃ।
প্রত্যহ মনকে খোঁচাতে হবে। কি করতে এসেছি, কি করে দিনটা গেল? বাস্তবিকই কি ভগবানকে আমার চাই। চাই যদি তো করছি কি? বুকে হাত দিয়ে বল দেখি চাওয়ার মতো কাজ করছিস কি না? মন ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে। তার গলা টিপে ধরতে হবে, ফাঁকি না দিতে পারে। সত্যকে ধরতে হবে—পবিত্র হতে হবে। যতই পবিত্র হবে ততই মনের একাগ্রতা বাড়বে ও মনের সূক্ষ্ম ফাঁকিগুলো ধরা পড়বে, আর সেগুলি সম্পূর্ণরূপে নাশ পাবে। ‘‘কে শত্রবঃ সন্তি নিজেন্দ্রিয়াণি। তান্যের মিত্রাণি জিতানি যানি।’’ এই মনই নিজের শত্রু আবার এই মনই নিজের মিত্র। যে যত Crossexamine (জেরা) করে মনের এই গলদ বের করে তার সম্যক নাশ করতে পারবে, সে তত দ্রুত এই সাধনরাজ্যে এগিয়ে যাবে।
খুব ধ্যানজপ করবি। প্রথম প্রথম মন স্থূল বিষয়ে থাকে। ধ্যানজপ করলে তখন সূক্ষ্ম বিষয় ধরতে শিখে। শীতকালই তো ধ্যানজপের সময়, আর এই-ই বয়স। ‘‘ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং’’ বলে বসে যা। সত্যই ভগবান আছেন কি না একবার দেখে নে না। একটু একটু তিতিক্ষা—যেমন অমাবস্যা, একাদশীতে একাহার করা ভাল। বাজে গল্পটল্প না করে সারাদিন তাঁর স্মরণ-মনন করবি। খেতে, শুতে, বসতে—সর্বক্ষণ। এইরূপ করলে দেখবি কুলকুণ্ডলিনী শক্তি ক্রমে ক্রমে জাগবে। স্মরণ-মননের চেয়ে কি আর জিনিস আছে? মায়ার পর্দা একটার পর একটা খুলে যাবে। নিজের ভিতরে যে কি অদ্ভুত জিনিস আছে দেখতে পাবি—স্ব-প্রকাশ হবি।
এক একটা দিন বয়ে যাচ্ছে, কি করছিস? এ দিন আর ফিরে আসবে না। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা কর। তিনি এখনো বর্তমান রয়েছেন। আন্তরিকভাবে ডাকলে তিনি পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। তাঁকে ছাড়িস নে, তাহলে মরবি। ‘তুমি আমার’, ‘আমি তোমার’—এই ভাব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন