শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিব রাত্রি ব্রত কথা


পুরাণমতে শিবরাত্রির আগের দিন অর্থাৎ ত্রয়োদশী তিথিতে সংযমী থেকে চতুর্দশীতে উপবাস করে পঞ্চাক্ষর মন্ত্র ‘ নমঃ শিবায়’ উচ্চারণে ভক্তরা ভক্তি নিবেদন করে।
পরে রাতে শিবলিঙ্গকে প্রথম প্রহরে ‘ হ্রীং ঈষণায় নমঃ’ মন্ত্রে দুধ দিয়ে‚ দ্বিতীয় প্রহরে ‘ হ্রীং অঘোরায় নমঃ’ মন্ত্রে দই দিয়ে‚ তৃতীয় প্রহরে ‘ হ্রীং বামদেবায় নমঃ’ মন্ত্রে ঘি দিয়ে এবং চতুর্থ প্রহরে ‘ হ্রীং সদ্যোজাতায় নমঃ’ মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পুজো করতে হয়।এই সময় প্রার্থনা করা হয়‚ হে শিব‚ তোমাকে নমস্কার।তুমি সৌভাগ্য‚ আরোগ্য‚ বিদ্যা‚ অর্থ‚ স্বর্গ‚ অপবর্গ দিয়ে থাকো।তাই এগুলো তোমার কাছে প্রার্থনা করছি।হে গৌরীপতি‚ তুমি আমাদের ধর্ম‚ জ্ঞান‚ সৌভাগ্য‚ কাম‚ সন্তান‚ আয়ু ও অপবর্গ দাও।চতুর্দশীর পরদিন ব্রাহ্মণের নিকট ব্রতকথা শুনে তাঁকে পুজো করে ভোজন ও যথাসাধ্য দক্ষিণা দানের বিধান আছে।নচেৎ শিব-রাত্রি ব্রত সম্পূর্ণ হয় না।
পুরাণে উক্ত আছে-যজ্ঞ‚ তীর্থ ‚ দর্শন‚ দান কিংবা অন্য কোনও ব্রতই মহাশিবরাত্রি ব্রতের এক ক্ষুদ্র অংশের সমান ফলদায়ক নয়।গরুড় পুরাণ থেকে জানা যায়-ইক্ষ্বাকু বংশের রাজা চিত্রভানু যখন জম্বুদ্বীপ (ভারতবর্ষ) শাসন করতেন‚ সেই সময় চিত্রভানু একবার শিবরাত্রির দিন রানির সঙ্গে উপবাস পালন করছিলেন।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হন মহামুনি অষ্টাবক্র।মুনি‚ রাজা চিত্রভানুকে উপবাস পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাজা বলেন‚ পূর্বজন্মে তিনি বারাণসীতে বাসকারী এক ব্যাধ ছিলেন-নাম ছিল সুস্বর।ছেলেবেলা থেকেই সুস্বর পশুপাখি মেরে বিক্রি করত ।
একবার বনে ঘুরতে ঘুরতে একটা হরিণ দেখে ধনুকে তীর জোড়েন।কিন্তু তীর ছাড়ার আগেই তার চোখে পড়ে যায় হরিণটির পরিবার ও তাদের দুঃখ ( হরিণটির আসন্ন মৃত্যুর জন্য)।তখন তার হাত থেকে তীরটি মাটিতে পড়ে যায়।সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাধ আর কোনও প্রাণীও পেল না । শেষে আশ্রয়ের জন্য ব্যাধ একটি গাছে উঠে পড়ে।কিন্তু ওঠার সময় তার জলের পাত্র থেকে জল সব পড়ে যায়।ফলে গাছে যখন সে উঠল তখন সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর।এছাড়া‚ হতভাগ্য এবং উপবাসী স্ত্রী পুত্র‚ যারা তার বাড়ি ফেরার চিন্তায় ব্যাকুল‚ তাদের কথা ভেবে ব্যাধ সুস্বর সারা রাত জেগে কাটানোর কথা চিন্তা করে‚ যাতে সে গাছ থেকে পড়ে না যায়।আর এর জন্য সে ওই গাছের একটি একটি করে পাতা ছেঁড়ে ও নিচে ফেলে।
পরদিন সকালে সে কিছু খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরে।কিন্তু সেই মুহূর্তেই এক অতিথি এসে উপস্থিত হলে ব্যাধ নিজের খাবার তাকে দিয়ে দেয় ও পরে সামান্য যেটুকু থাকে সেটুকুই সে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।পরে তার মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে শিব তার কাছে দূত পাঠান।তখন সে শিবের দূতের কাছেই প্রথম জানতে পারে‚ যে গাছে সে উঠেছিল‚ সেটি ছিল একটি বেলগাছ।আর তার নিচেই ছিল শিবলিঙ্গ ।আর তার গাছে ওঠার সময় পড়ে যাওয়া জলে শিবলিঙ্গের স্নান হয়।নিজের অজান্তেই সে যে শিবপুজো করেছে‚ তা সে জানতে পারে।গল্প শেষ করে রাজা চিত্রভানু অষ্টাবক্র মুনিকে জানান যে, চিত্রভানু রূপে জন্মানোর আগে দীর্ঘদিন তিনি শিবের অনুগ্রহ লাভ করে বেঁচে ছিলেন।শিবরাত্রি ব্রতের অধিকারী রূপে নারী-পুরুষের কোনও ভেদ না থাকায় যে কোনও নারী বা পুরুষ বাল্যে‚ মধ্যবয়সে অথবা বার্ধক্যে এই ব্রত পালন করতে পারে।
আমাদের সমাজে যদিও মেয়েরাই বেশিরভাগ এই ব্রত পালন করে থাকে।কারণ‚শিবের মতো বর পাওয়ার আকাঙ্খা ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়।শিবরাত্রি প্রসঙ্গে লিখতে বসে এ কথা না লিখে পারা যাচ্ছে না তা হল‚ সাধারণ মানুষের মধ্যে সত্যনিষ্ঠা ক্রমশ কমে যাচ্ছে ।জীবনের মূল্যবোধও লুপ্তপ্রায়।সারা বছর নানারকম উৎসব চলে।কিন্তু উৎসবের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কর্মকর্তারা অজ্ঞান।ফলে ভোগসর্বস্ব শৃঙ্খলাহীন‚ নিয়মানুবর্তিতাহীন‚ সত্যহীন আচরণেই তারা মেতে উঠেছে।তাই আজকের দিনে ভক্তি ভরে শিবরাত্রি পালন করা প্রয়োজন।শিবের কৃপা লাভ করলেই সমাজে শান্তি ফিরে আসবে।
হর হর মহাদেব.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন