আমি পরকালের ভয় দেখাইয়া কাহাকেও ধার্ম্মিক করিতে চাহি না। কেন না, অনেক লোক পরকাল মানে না-মুখে মানে ত হৃদয়ের ভিতর মানে না; মনে করে, ছেলেদের জুজুর ভয়ের মত মানুষকে শান্ত করিবার একটা প্রাচীন কথা মাত্র। তাই আজিকালি অনেক লোক পরকালের ভয়ে ভয় পায় না। পরকালের দুঃখের ভয়ের উপর যে ধর্ম্মের ভিত্তি, তাহা এই জন্য সাধারণ লোকের হৃদয়ে সর্ব্বত্র বলবানই হয় না। “আজিকার দিনে” বলিতেছি; কেন না, একসময়ে এদেশে সে ধর্ম্ম বড় বলবান ছিল বটে। এক সময়ে, ইউরোপেও বড় বলবান্ ছিল বটে, কিন্তু এখন বিজ্ঞানময়ী একুশ শতাব্দী। সেই রক্তমাংস-পূতিগন্ধ-শালিনী, কামান-গোলা-বারুদ-ব্রীচ্লোডর-টর্পীডো প্রভৃতিতে শোভিতা রাক্ষসী,-এক হাতে শিল্পীর কল চালাইতেছে, আর এক হাতে ঝাঁটা ধরিয়া, যাহা প্রাচীন, যাহা পবিত্র, যাহা সহস্র সহস্র বৎসরের যত্নের ধন, তাহা ঝাঁটাইয়া ফেলিয়া দিতেছে। সেই পোড়ারমুখী, এদেশে আসিয়াও কালা মুখ দেখাইতেছে। তাহার কুহকে পড়িয়া, তোমার মত সহস্র সহস্র শিক্ষিত, অশিক্ষিত, এবং অর্দ্ধশিক্ষিত বাঙ্গালী পরকাল আর মানে না। তাই আমি এই ধর্ম্মব্যাখ্যায় যত পারি, পরকালকে বাদ দিতেছি। তাহার কারণ এই যে, যাহা তোমাদের হৃদয়ক্ষেত্রে নাই, তাহার উপর ভিত্তি সংস্থাপন করিয়া আমি ধর্ম্মের মন্দির গড়িতে পারিব না। আর আমার বিবেচনায়, পরকাল বাদ দিলেই ধর্ম্ম ভিত্তিশূন্য হইল না। কেন না,ইহলোকের সুখও কেবল ধর্ম্মমূলক, ইহকালের দুঃখও কেবল অধর্ম্মমূলক। এখন ইহকালের দুঃখকে সকলেই ভয় করে, সুখ সকলেই কামনা করে। এজন্য ইহকালের সুখ দুঃখের উপরও ধর্ম্ম সংস্থাপিত হইতে পারে। এই দুই কারণে, অর্থাৎ ইহকাল সর্ব্ববাদিসম্মত, এবং পরকাল সর্ব্ববাদিসম্মত নহে বলিয়া, আমি কেবল ইহকালের উপরই ধর্ম্মের ভিত্তি সংস্থাপন করিতেছি।
শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আমি পরকালের ভয় দেখাইয়া কাহাকেও ধার্ম্মিক করিতে চাহি না
আমি পরকালের ভয় দেখাইয়া কাহাকেও ধার্ম্মিক করিতে চাহি না। কেন না, অনেক লোক পরকাল মানে না-মুখে মানে ত হৃদয়ের ভিতর মানে না; মনে করে, ছেলেদের জুজুর ভয়ের মত মানুষকে শান্ত করিবার একটা প্রাচীন কথা মাত্র। তাই আজিকালি অনেক লোক পরকালের ভয়ে ভয় পায় না। পরকালের দুঃখের ভয়ের উপর যে ধর্ম্মের ভিত্তি, তাহা এই জন্য সাধারণ লোকের হৃদয়ে সর্ব্বত্র বলবানই হয় না। “আজিকার দিনে” বলিতেছি; কেন না, একসময়ে এদেশে সে ধর্ম্ম বড় বলবান ছিল বটে। এক সময়ে, ইউরোপেও বড় বলবান্ ছিল বটে, কিন্তু এখন বিজ্ঞানময়ী একুশ শতাব্দী। সেই রক্তমাংস-পূতিগন্ধ-শালিনী, কামান-গোলা-বারুদ-ব্রীচ্লোডর-টর্পীডো প্রভৃতিতে শোভিতা রাক্ষসী,-এক হাতে শিল্পীর কল চালাইতেছে, আর এক হাতে ঝাঁটা ধরিয়া, যাহা প্রাচীন, যাহা পবিত্র, যাহা সহস্র সহস্র বৎসরের যত্নের ধন, তাহা ঝাঁটাইয়া ফেলিয়া দিতেছে। সেই পোড়ারমুখী, এদেশে আসিয়াও কালা মুখ দেখাইতেছে। তাহার কুহকে পড়িয়া, তোমার মত সহস্র সহস্র শিক্ষিত, অশিক্ষিত, এবং অর্দ্ধশিক্ষিত বাঙ্গালী পরকাল আর মানে না। তাই আমি এই ধর্ম্মব্যাখ্যায় যত পারি, পরকালকে বাদ দিতেছি। তাহার কারণ এই যে, যাহা তোমাদের হৃদয়ক্ষেত্রে নাই, তাহার উপর ভিত্তি সংস্থাপন করিয়া আমি ধর্ম্মের মন্দির গড়িতে পারিব না। আর আমার বিবেচনায়, পরকাল বাদ দিলেই ধর্ম্ম ভিত্তিশূন্য হইল না। কেন না,ইহলোকের সুখও কেবল ধর্ম্মমূলক, ইহকালের দুঃখও কেবল অধর্ম্মমূলক। এখন ইহকালের দুঃখকে সকলেই ভয় করে, সুখ সকলেই কামনা করে। এজন্য ইহকালের সুখ দুঃখের উপরও ধর্ম্ম সংস্থাপিত হইতে পারে। এই দুই কারণে, অর্থাৎ ইহকাল সর্ব্ববাদিসম্মত, এবং পরকাল সর্ব্ববাদিসম্মত নহে বলিয়া, আমি কেবল ইহকালের উপরই ধর্ম্মের ভিত্তি সংস্থাপন করিতেছি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন