মহর্ষি সনৎকুমার মহেশ্বরকে বলছেন - হে বিভো ! আপনি সকলের আদিতে আবির্ভূত হয়েছেন , তাই আপনি আদিদেব । অন্যান্য দেবগণের অল্প দেবত্বের কারণ আপনাকে মহাদেব মানা হয় । কল্যাণরূপ হওয়ার কারণ আপনি শিব । পাপসমূহ হরণ করার জন্য আপনি হর । হে দেব ! একমাত্র আপনার পূজাতেই পঞ্চায়তন পূজা হয়ে যায় , যা দ্বিতীয় কারও পূজায় সম্ভব নয় । সকলকে বিরক্তি শিক্ষা দেওয়ার কারণ শ্মশান তথা পর্বতে নিবাস করেন । এক তুচ্ছ প্রাণী আমি কোটি জন্মেও আপনার প্রভাবের বর্ণনা করতে পারব না । অতঃ হে মহেশ্বর ! আমার উপর কৃপা করে বলুন - বারো মাসের মধ্যে কোন মাস সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ? কোন মাস আপনার প্রিয় এবং সম্পূর্ণ কর্মের সিদ্ধিপ্রদাতা ? ঈশ্বর বললেন - হে সনৎকুমার ! আমি তোমার শ্রবণেচ্ছা তথা ভক্তিতে অত্যন্ত প্রসন্ন । শোন - বারো মাসের মধ্যে শ্রাবণ মাস আমার অত্যন্ত প্রিয় । এর মাহাত্ম্য শ্রবণ করার যোগ্য , তাই এই মাসকে শ্রাবণ বলা হয় । এই মাসে শ্রবণা নক্ষত্রযুক্ত পূর্ণিমা হয় , এজন্য এঁকে শ্রাবণ বলা হয় । নির্মলতা গুণের জন্য শ্রাবণ মাস আকাশ সমান তাই এঁকে নভা বলা হয় । এই মাসের প্রত্যেকটি তিথিই ব্রত করার যোগ্য । আর্ত জিজ্ঞাসুদের , ভক্তদের , অর্থ কামনাকারীদের , মোক্ষ অভিলাষীদের এবং অভীষ্ট আকাঙ্ক্ষাকারীদের এই শ্রাবণ মাসে ব্রতানুষ্ঠান করা প্রয়োজন । এই মাস পরম পবিত্র মাস । হে যোগী ! শ্রাবণ মাসে নিয়মপূর্বক নক্তব্রত ( রাত্রিভোজন ) করতে হয় । সারাদিন উপবাস থেকে সূর্যাস্তের পর একবার ভোজন , অতি প্রিয় বস্তু ব্যবহার না করে ব্রাহ্মণকে ভোজন এবং দান করলে , তা নক্তব্রত হয় । হে বিধিনন্দন ! সমস্ত শ্রাবণ মাসে নিয়ম করে রুদ্রাভিষেক বা রুদ্রযজ্ঞ বা রুদ্রপাঠ করা উচিত । লক্ষ্মী এবং শান্তিকামী মানুষকে এক লক্ষ বেলপাতা দিয়ে শিবার্চণা করতে হয় , এর নাম লক্ষ পূজা । এককোটি পার্থিব শিবলিঙ্গ বানিয়ে পূজা করা উচিত । পবিত্র শ্রাবণ মাসে পুরশ্চরণ নিশ্চিত রূপে মন্ত্র সিদ্ধ হয় । এই মাসে ষড়ক্ষর ওঁ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র জপ , শিব পরিক্রমা , নমস্কার তথা বেদ পারায়ণ করণীয় । হে ব্রহ্মাপুত্র !পবিত্র শ্রাবণ মাস সকাম ব্যক্তির অভীষ্ট দাতা এবং নিষ্কাম ব্যক্তির মোক্ষ দাতা । শ্রাবণ মাসে শাক , ভাদ্র মাসে দই , আশ্বিনে দুধ এবং কার্তিক মাসে ডাল পরিত্যাগ করতে হয় । যদি কোনও কারণে উক্ত মাসে এসব বস্তু ত্যাগ করা সম্ভব না হয় , কেবল শ্রাবণ মাসেই এসব বস্তু ত্যাগ করলে যথোচিত ফল লাভ হয় । পুরাণে পুরুষোত্তম মাস সহ প্রায় সব মাসের মাহাত্ম্য উল্লিখিত হয়েছে কিন্তু এদের মধ্যে শ্রাবণমাস বিশেষ , শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র । মহাভারতের অনুশাসন পর্বে মহর্ষি অঙ্গিরা বলেছেন - যিনি মন এবং ইন্দ্রিয়সমূহ সংযম রেখে দিনে একবার ভোজন করে ( নক্তব্রত ) শ্রাবণমাস অতিবাহিত করে , তিনি বিভিন্ন তীর্থস্নান করার পুণ্যফল অর্জন করে এবং নিজ জ্ঞাতিজনের বৃদ্ধি করে ।
ওঁ নমঃ শিবায়
ওঁ নমঃ শিবায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন