শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মাছ খাওয়ানো কতোটা যুক্তি যুক্ত

<3






আসুন দেখে নিই শাস্ত্র কি বলে....

বিষয়টাকে বেশি না ঘুরিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত ও গীতারআলোকে বিশ্লষণ করছি । নিরামিশ করা শ্রাদ্ধে যুক্তিযুক্ত নাকি আমিষ করা একটু পরে আশাকরি সকলে বুঝতে পারবেন।

আমরা সকল ধার্মিক হিন্দুরাই জানি একজন
হিন্দু লোক মারা গেলে বলতে হয়...
দিব্যান লোকান্ স্ব গচ্ছতু
অর্থাৎ, তিনি দিব্যধাম প্রাপ্ত হোক ।
দিব্য মানে দেবতার স্থান যেখানে দেবতারা ভগবানের আরাধনায় মগ্ন থাকেন ।অপরদিকে মাছ মাংস মদ ইত্যাদি ডায়নী ও পেতনীর খাবার । আমরা দেখি অধিকাংশ হিন্দু পরিবারে মানুষ মারাগেলে মৃত দেহের আত্মার শান্তির লক্ষ্যে এবং ভগবান কিংবা দেবধামে যাওয়ার লক্ষ্যে আত্মীয় স্বজনকে শ্রাদ্ধে মাছ
খাওয়ান তাহলে কি বুঝলেন?
শাস্ত্রের নিয়মে আমরা একদিকে দিব্যধামে যাওয়ার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি অন্যদিকে ভূত পেতনীর খাবার মানুষকে খাইয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি যে তিনি দিব্যধামে প্রবেশ করুক ।
পেতনীর খাবার যদি মানুষকে খাইয়ে শ্রাদ্ধে বিষ্ণুর নিয়ম অমান্য করে পেতনী শাদ্ধ করি তাহলে মৃত ব্যক্তি কি স্বর্গে যাবে নাকি পেতনি লোকে যাবে সেটা নিশ্চয় সকলে বুঝতে পারছেন।
শ্রীমদ্ভাগবতে
(৫/২৬/৫-৩৬) বর্ণনা আছে ২৮টি নরক কুণ্ডের কথা তারমধ্যে ৩ নাম্বার নরক রৌরব, ৫ নাম্বার নরক কুম্ভীপাক, ৯ নাম্বার নরক অন্ধকূপ, ১৬নাম্বার নরক প্রাণরোধ, ১৭নাম্বার নরক বিশসন, ২৩ নাম্বার নরক রক্ষোভোজন, ২৪ নাম্বার নরক শূলপ্রোত ।
সবগুলো নরককুন্ড পশু হত্যাও, খাওয়া কিংবা অন্যকে খাওয়ানোর অপরাধে তৈরি অর্থাৎ ভাগবতের ২৮টি নরককুন্ডের মধ্যে এই কুণ্ডগুলোতে পাঠানো হবে যারা
পশুকে বিভিন্নভাবে হত্যা করে,নিজে আহার করে কিংবা অন্যকে আহার করায় ।
সুতরাং শ্রাদ্ধ মানে বিষ্ণুর প্রীতির উদ্দেশ্যে যা কিছু দান করা হবে তাই শ্রাদ্ধ আর গীতা ও ভাগবতে যেহেতু মাছ,মাংস আহার নিষেধ তাইশ্রাদ্ধ হবে গীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিয়ম অনুসারে যেখানে,
পরমেশ্বর বলেছেন....
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং
অর্থাৎ যে আমাকে পত্র পুষ্প ফল ও জল দিয়ে নিবেদন করবে আমি তার নিবেদন ভক্তিসহকারে গ্রহণ করি ।
আশা করি কিভাবে শ্রাদ্ধ করা উচিত বুঝতে পারছেন।।
ভুল এুটি হলে ক্ষমা করবেন :-)

আপনি কি জানেন?




বাংলা সাত বারের নাম ও
বাংলা বার মাসের নাম হিন্দু
দেবতাদের নাম
অনুসারে হয়েছে?তাহলে দেখুন
শনিবার-শনি দেবতার নাম
অনুসারে
রবিবার-রবি বা সূর্য দেবতার
নাম অনুসারে
সোমবার-সোম বা শিব দেবতার
নাম অনুসারে
মঙ্গলবার-ধূপ বা দ্বিপের নাম
অনুসারে
বুধবার_বৃহস্প্র
তিবার_শুক্রবার- গ্রহের নাম
অনুসারে
বৈশাখ-কীর্ত্তন নাম অনুসারে
জৈষ্ঠ-অগ্নি দেবতার নাম
অনুসারে
আষাঢ়-আষাঢ়ি পূর্ণিমার নাম
অনুসারে
শ্রাবন-ব্রাক্ষ্ মা দেবের নাম
হতে
ভাদ্র-শ্রীকৃষ্ণ ের বাঁশি হতে
আশ্বিন-অশ্বিনী কুমারের নাম
হতে
কার্তিক-কার্তিক দেবতার
নাম অনুসারে
অগ্রহায়ন-সূর্য দেবতার
পরিক্রমণ হতে
পৌষ-পার্বন হতে আগত
মাঘ-তীর্থস্হান হতে আগত
ফাল্গুন-জলন্ত কাঠ বা যজ্ঞ
হতে আগত
চৈত্র-বাসন্তী দেবীর
শাড়ি হতে আগত
মূলত সূর্যকে কেন্দ্র করে এসব
নামের উৎপত্তি ।সম্রাট আকবর
আরবের সাথে হাত মিলিয়েও এই
নামগুলি পরিবর্তন
করতে পারে নাই ।আর পারবেও
না.

গীতা তথ্য কনিকা




গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম ।
গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে ।
গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ
মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ ।
গীতায় আছে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক ।
গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্ম ষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তি ষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞান ষটক ।

যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছরেরও আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন ।
গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন ।
গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন ।
গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ ।
ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় ।
ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে ।
(সংক্ষিপ্ত)
Photo: গীতা তথ্য কনিকা ☛ গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম । গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে । গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ । গীতায় আছে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক । গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্ম ষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তি ষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞান ষটক । ☛ যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছরেরও আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন । গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন । গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন । গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ । ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় । ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে । (সংক্ষিপ্ত)

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ





বেদ হিন্দুদের আদি ধর্ম গ্রন্থ । বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। এটা হিন্দু সমাজ মেনে চলে কঠোর ভাবে।

কিন্তু কিছুদিন ধরে ইন্টারনেট ফোরাম গুলো তে হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রপোগান্ডা চলছে। এরা চায় ১০০ কোটি হিন্দু নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করে তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হোক যেটা তাদের মতে সর্বশেষ পথ । বেশির ভাগ হিন্দুই নিজের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী নয় তাই তারা এই শিকারীদের সহজ শিকারে পরিনত হচ্ছে । দেখা যাক বেদ গোহত্যা নিয়ে কি বলে?


১. Ghrtam duhaanaamaditim janaayaagne maa himsiheeh
Yajurveda 13.49
Do not kill cows and bulls who always deserve to be protected.

২. Aare gohaa nrhaa vadho vo astu
Rigveda 7.56.১৭

ঋগবেদে গোহত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে বলা হয়েছে ।

৩. Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba shuddhamudakamaacharantee
Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or Atharv 9.10.২০

The Aghnya cows – which are not to be killed under any circumstances– may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.

বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ।

আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয় ।
অহি মানে যার গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় ।
অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয় ।

(Source: Yaska the commentator on Nighantu )

৪. Aghnyeyam saa vardhataam mahate soubhagaaya
Rigveda 1.164.27

আঘ্ন্যা গরু আমাদের সুসাস্থ্য ও উন্নতি আনে ।

৫. Suprapaanam Bhavatvaghnyaayaah
Rigveda 5.83.৮

আঘ্ন্যা গরুর জন্য সুপেয় জলের উন্নত ব্যবস্থা থাকা উচিত ।

৬.
Yah paurusheyena kravishaa samankte yo ashwena pashunaa yaatudhaanah
Yo aghnyaayaa bharati ksheeramagne teshaam sheershaani harasaapi vrishcha
Rigveda 10.87.16
Those who feed on human, horse or animal flesh and those who destroy milk-giving Aghnya cows should be severely punished.

এখানে মানুষ,ঘোড়া ও গোমাংস আহারকারিদের শাস্তির কথা বলা আছে ।

৭. Vimucchyadhvamaghnyaa devayaanaa aganma
Yajurveda 12.73

The Aghnya cows and bulls bring you prosperity.

৮. Maa gaamanaagaamaditim vadhishta
Rigveda 8.101.15
Do not kill the cow. Cow is innocent and aditi – that ought not to be cut into pieces .

৯. Antakaaya goghaatam
Yajurveda 30.18
Destroy those who kill cows .

১০.
Yadi no gaam hansi yadyashwam yadi poorusham
Tam tvaa seesena vidhyaamo yatha no so aveeraha
Atharvaveda 1.16.4
If someone destroys our cows, horses or people, kill him with a bullet of lead.

১১. Vatsam jaatamivaaghnyaa
Atharvaveda 3.30.1
Love each other as the Aghnya – non-killable cow – loves its calf.

কিছু কি আর বলা লাগবে বেদ গো হত্যার পক্ষে নাকি বিপক্ষে ?

১২. Dhenu sadanam rayeenaam
Atharvaveda 11.1.34
Cow is fountainhead of all bounties .

ঋগ্বেদের ৬ মন্ডলের ২৮ সুক্ত গরুর প্রশংসা করেছে।

Aa gaavo agnamannuta bhadramakrantseedantu
Bhooyobhooyo rayimidasya vardhayannabhinne
Na taa nashanti na dabhaati taskaro naasaamamitro vyathiraa dadharshati
Na taa arvaa renukakaato ashnute na samskritramupa yanti taa abhi
Gaavo bhago gaava indro me achhaan
Yooyam gaavo medayathaa
Maa vah stena eeshata maaghanshasah

1. Everyone should ensure that cows are free from miseries and kept healthy.
2. God blesses those who take care of cows.
3. Even the enemies should not use any weapon on cows
4. No one should slaughter the cow
5. Cow brings prosperity and strength
6. If cows keep healthy and happy, men and women shall also keep disease free and prosperous
7. May the cow eat green grass and pure water. May they not be killed and bring prosperity to us.

তারপরও কিছু স্বঘোষিত Scholar হিন্দু বিরোধী Site থেকে copypaste করে যাচ্ছে। এদের উদ্দেশ্যে বলব “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী “।

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ এটা কমুনিস্ট এবং মিশনারীরা মানতে পারে না। আমাদের বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের সমাজ এর চেয়ে আদর্শিক ভাবে উন্নত। এদের সাথে যোগ হয়েছে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। তারা বেদ ও মনুসংহিতা থেকে গরুর মাংস খাওয়ার Reference খুঁজে বের করতে চায় একটি এদের সহজ Trick হচ্ছে ‘মানসা‘ কে meat / মাংস হিসেবে অনুবাদ করা । ‘মানসা‘ মানে ডাল জাতীয় খাবার ।
আজ বেদ হতে কিছু অপপ্রচার এর জবাব দিব।

১. অপপ্রচার:
Rigveda (10/85/13) declares, “On the occasion of a girl’s marriage oxen and cows are slaughtered.”

জবাব: প্রকৃতঅর্থে মন্ত্র টি বলে সূর্যের আলো শীতকালে ম্লান হয়ে যায় এবং বসন্ত কালে শক্তি ফিরে পায় । (the rays of sun get weakened and then get strong again in spring.)

The word used for sun-rays in ‘Go’ which also means cow and hence the mantra can also be translated by making ‘cow’ and not ‘sun-rays’ as the subject. The word used for ‘weakened’ is ‘Hanyate’ which can also mean killing. But if that be so, why would the mantra go further and state in next line (which is deliberately not translated) that in spring, they start regaining their original form.How can a cow killed in winter regain its health in spring? This amply proves how ignorant and biased communists malign Vedas.

সমপদ জিনিস তা এরা বুজে না।

২. অপপ্রচার: Rigveda (6/17/1) states that “Indra used to eat the meat of cow, calf, horse and buffalo.”

জবাব: মন্ত্র টি বলছে মেধাবী পন্ডিতরা বিশ্ব কে আলোকিত করেন যেমন কাঠ যোগ্গের এর আগুন এর আলো বাড়ায় ।

৩. অপপ্রচার: ব্লগ এ ম জ বাসার নামে এক পন্ডিত বলছে(লিঙ্ক),”বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।”

জবাব: সমপদের অর্থ আর প্রয়োগ না জানলে এ রকম ই হবে ।
যেমন:
�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.�

সোজা কথায় মন্ত্রের অর্থ হবে কেশব/কৃষ্ণ কে পরে যেতে দেখে পান্ডবরা উল্লসিত হলো আর কৌরবরা ও কৃষ্ণ, ও কৃষ্ণ বলে অর্থনাদ করে উঠলো।
এখন এটার কোনো মানে হয় না । কারণ কৃষ্ণ ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে।

একই শব্দের নানা অর্থ থাকে।

দেখুন:
১. কেশব= জল
২. পান্ডব= সারস পাখি
৩. কৌরব= কাক
৪. শব= মৃত দেহ
এবার অর্থ দেখুন:

�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.�

মৃত দেহটিকে জলে পড়ে যেতে দেখে সারস পাখি খুশি হলো এবং কাক আর্তনাদ করে উঠলো- মৃত দেহটি
জলে পড়ে গেছে, মৃত দেহটি জলে পড়ে গেছে।

এখন আমাদের পন্ডিতরাকি বলবেন ‘ কৃষ্ণকে পান্ডবরা ঘৃনা করতেন?’
একই ভাবে বাসার ভাই চালাকি করেছেন ।

আমি দেখাচ্ছি:

“বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।”

অপপ্রচার: ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]
জবাব:

�ghastta indra ukshshaNaH priyam…..� _RigVeda 10.86.13

�ukshshaNo hi me panchadasha sAkaM pachanti vimshatiM…� _RigVeda 10.86.14

অর্থ :

rik 10.86.13, IndrANi tells Indra, �please receive your favorite soma quickly..�

In rik 10.86.14 Indra replies, �they are preparing soma for offering fifteen and twenty times..�

এখানে ukshshNa মানে সোম, বৃষ নয়।

অপপ্রচার:
মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮] খাওয়ার কথা রয়েছে ।

জবাব:
�trI yachChatA mahishshANAmag
ho mastrI….� _ RigVeda 5.29.8
সঠিক অর্থ:
oh Indra, when
you have recieved three hundred offerings of soma, you will be powerful to kill vr^tra.

অপপ্রচার: অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।
জবাব:
�eshshachChAgaH puro ashvena vAjinA…� _RigVeda 1.162.3
সঠিক অর্থ:

�the morning fire is lit before, thew sun, the giver of food rises�



এখানে ছাগ মানে shr^ngarahita ajA / সিন্হীন ছাগল নয় বরং উষালোক।

অপপ্রচার: বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩] খাওয়া হতো।

জবাব:

�…ukshANaM pRshnimapachanta vIrAH…….�…_ RigVeda 1.164.43

সঠিক অর্থ: I saw from far away the smoke of fuel with spires that rose on high o’er that beneath it.
The Mighty Men have dressed the spotted bullock. These were the customs in the days aforetime,

অপপ্রচার: পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।

জবাব:

Excellent is the glance, of brightest splendour, which the auspicious God bestows on mortals-
The God’s glance, longed-for even as the butter, pure, heated, of the cow, the milch-cow’s bounty.

কোথাও বলা নেই গরু কে জবাই কর ।

অপপ্রচার: – গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]।
জবাব:
এখানে Grifith সাহেবের Translation করলে হবে না । Grifith হিন্দুদের খ্রিস্টিয়ান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে সেই Translation করেসিলেন এটা প্রমানিত । এখানে এই ধরনের কোনো কথা বলা হয় নি । এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীত ।

Indra- O glorious warrior!
Te- Your
Aghasya- destroyer of evil
Chetya- power
Kahrrisvit- when
Asat- will appear
Yat- with which you
Rakshah- monsters
Bhinadah- kill
Mitrkruvo- those who are cruel to our dear ones
Eshat- cast terror in them
Yat- so that
Shasne- in the battlefield
Na- just like
Aaryak- after death
Gaavah- animals
Prathivyah- on the field
Shayante- lay or sleep

O glorious soldier! Where is your valor with which you kill the devils and cast terror in the hearts of wrong-doer cruel criminals and due to which they will be lying dead just like animals lay on ground while sleeping.(Rig Veda 10.89.14)

আমি সকল কে বলব বেদ থেকে একটি মন্ত্র দেখান যেটাতে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া বৈধতা দেয়া হয়েছে তাহলে আমি আপনার কথা মত বিশ্বের যেকোনো ধর্ম গ্রহণ করব আর আপনি যদি না পারেন তবে আপনাকে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসতে হবে।

ইসলাম-পূর্ব আরবে আরবি পবিত্র বেদের স্তুতি


আরবি মানে আজ বিশ্বের মানুষ বুঝে ইসলামের ভাষা। মূলত ইসলামের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ কোরআন ই আরবি ভাষায় রচিত। কিন্তু আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব জানেন ইসলাম-পূর্ব আরবে আরবি পবিত্র বেদের স্তুতি।

এখানে একটি কবিতা দেয়া হল আরবি কবি লাবি-বিন-ই-আখতাব-বিন-ই-তুরফার যিনি ইসলাম-পূর্ব আরবে বাস করতেন।


“আয়া মুয়ারেকাল আরজ উশাইয়া নোহা মিনার হিন্দ-ই(ভারত) ওয়া আরাদকআল্লাহা মান্নোনাইফেইল জীকারাতুন”
“হে হিন্দের (ভারত) পবিত্র ভূমি পরম আশীর্বাদ প্রাপ্ত কারন ঈশ্বর(কবিতায় তিনি আল্লাহ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন) দ্বারা নির্বাচিত,জ্ঞানদারা আশীর্বাদ প্রাপ্ত ”

“ওয়াহালাটিযালি যতুন আইনানা সাহাবী অখা-অতুন যিকরা ওয়াহাযায়হি যোনাজ্জালুর-রোসু মিনাল হিন্দাতূন।
” সেই স্বর্গীয় জ্ঞান যেটি চারটি বাতিঘরের মত মহিমায় দীপ্ত- ভারতীয় ঋষিদের দ্বারা অজস্রবার উচ্চারিত ”

“ইয়াকূলূণাল্লাহা য়া আহাল আরাফ আলামীন কূল্লাহূম ফাততাবী-উ-যিকারাতূল বেদ বূক্কূম মালাম জোণাজ্জায়লাতুন।“
” ঈশ্বর(কবিতায় তিনি আল্লাহ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন) সমগ্র মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন, বেদের পথ অনুসরণ করতে তার স্বর্গীয় নির্দেশাবলী সহ। ”

ওয়াহোয়া আলামুস সাম ওয়াল যজুর মিনাল্লাহ তানাজিলান ফা ইনোমা য়া আখিগো মুতিয়াবায় আন ইয়োবাসশেরিয়োনা যতুন।

“ জ্ঞানের বিস্ফোরণে সাম এবং যজুর সৃষ্টির উপর অবতীর্ণ, তাই ভাইরা বেদকে সম্মান করে এবং অনুসরণ করেন এবং মুক্তির পথ দেখান।”


“ওয়া ঈসা নাইন হুমা ঋগ অথর্ব নাসায়হিন কা আ খুয়াতুন ওয়া আসান্ত আলা-উদান ওয়াবোয়া মাশা-ই-রাতুন”

” বাকি দুই, ঋগ এবং অথর্ববেদ আমাদের শিক্ষা দেয় ঐক্য, তাদের জ্যোতির নিচে আশ্রয় দেয় এবং অনন্তকাল পর্যন্ত অন্ধকার দূরীভূত করে।”

এই কবিতাটি লাবি-বিন-ই-আখতাব-বিন-ই-তুরফার রচিত। তিনি আরবে থাকতেন ১৮৫০ খৃস্টপূর্বে । এটা ছিল নবী মোহাম্মদের জন্মের ২৩০০ বছর আগে। এটা সার-উল-অকুলে পাওয়া গিয়েছে। ১৭৪২ সালে অটোম্যান তুর্কি রাজা সুলতান সালিমের আদেশে সংকলন করা হয়।

( সূত্রঃ “Vedic History of Pre-Islamic Mecca” by Shrimati Aditi Chaturvedi )

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

পশুদের রক্ষা কর-পবিত্র বেদ





বেদ মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ গ্রন্থ। মনুষ্য জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের সঠিক দিক নির্দেশনা সম্বলিত এক পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান। অহিংসা,সত্য, উদার এবং মহত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার উপদেশ বেদ আমাদের দিয়েছে। কিন্তু একটি নিরীহ নির্দোষ প্রাণী হত্যার দ্বারা কি কখনো মহত্বে অধিষ্ঠিত হওয়া যেতে পারে? বেদ কি আদৌ আমাদের নির্দোষ প্রাণীদের হত্যা করার শিক্ষা দেয়?

কখনোই না। কারন বেদেই স্পষ্ট আছে - ["অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে"(অথর্ববেদ ১০।১।২৯) অর্থাৎ হে হিংসক্রিয়ে, নিরপরাধ এর হত্যা নিশ্চিতভাবে ভয়ংকরপ্রদ] অতএব নিরাপরাধ পশুদের নিরন্তর রক্ষা করো।
যজুর্বেদ ১৩ অধ্যায়ের ৪৭ - ৫০ নং মন্ত্রগুলোতে ইহা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে-
.
=>>যজুর্বেদ ১৩।৪৭
হে হাজারো প্রকার দৃষ্টিযুক্ত রাজন! তুমি সুখ প্রাপ্ত করার জন্য নিরন্তন বৃদ্ধি হয়ে এই দ্বিপদী মনুষ্য এবং চতুষ্পদী পশুকে মেরো না। হে জ্ঞানবান! তুমি পবিত্র অন্ন উৎপন্ন কারী বন্য পশুকে প্রেম করো, তাদের বৃদ্ধি প্রার্থনা করো। এবং তাদের বৃদ্ধি দ্বারা নিজ সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে নিজ শরীর মধ্যে হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে স্থির হও। তোমার সন্তাপকারী ক্রোধ বা তোমার পীড়া, হিংসক বন্য পশুর প্রাপ্ত হোক। এবং যাদের আমরা প্রীতি করি না, তাদের তোমার সন্তাপকারী ক্রোধ বা পীড়া প্রাপ্ত হোক।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>> যজুর্বেদ ১৩।৪৮
হে পুরুষ! এই হর্ষ ধ্বনি কারী , যা সব প্রকার কষ্ট সহনের সামর্থ্য এক ক্ষুরযুক্ত বেগবান,যা সংগ্রামপযোগী পশুদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক বেগবান অশ্ব, গাধা,খচ্চর আদি পশুকে মেরো না। জঙ্গলে গৌর নামক পশু কে লক্ষ্য করে তোমাকে আমি এই উপদেশ করছি যে, তাদের বৃদ্ধিতে তুমি নিজেকেও বৃদ্ধি করে নিজ শরীর কে রক্ষা করো। তোমার শোক, সন্তাপ বা ক্রোধ সেই গৌর নামক ক্ষেতের হানিকারক মৃগের প্রাপ্ত হোক।যাদের প্রতি আমাদের প্রীতি নেই, তোমার শোক সন্তাপ বা ক্রোধ তাদের প্রাপ্ত হোক।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>>যজুর্বেদ ১৩।৪৯
আকাশ অন্তরীক্ষের মধ্যে বিবিধ প্রকারে বিস্তার কারী শত ধারা বর্ষনকারী আশ্রয়, সোমরূপ মেঘের সমান লোক মধ্যে বিদ্যমান শতজনের ধারক পোষক এবং হাজারো সুখপ্রদ পদার্থের উৎপাদক এই বৃষ কে এবং মনুষ্যের হিতের জন্য ঘী, দুগ্ধ, অন্ন আদি পুষ্টিকারক পদার্থ প্রদানকারী অহিংসনীয়, পৃথিবী সমান গাভী কে, হে রাজন! আপন সর্বোৎকৃষ্ট স্থান মধ্যে বা আপন রক্ষন কার্যের মধ্যে তৎপর হয়ে মেরো না। তোমাকে আমি বন্য পশু গবয় এর উপদেশ করি। উহা দ্বারা নিজ ঐশ্বর্য কে বৃদ্ধি করে নিজ শরীরকে স্থির করো। তোমার শোক সন্তাপ বা ক্রোধ "গবয়" নামক পশুর প্রাপ্ত হোক। এবং যেই শত্রুকে আমরা দ্বেষ করি, তোমার সন্তাপ এবং পীড়াদায়ক ক্রোধ তাহার প্রাপ্ত হোক।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>>যজুর্বেদ ১৩।৫০
হে রাজন! তুমি পরম সর্বোচ্চ "ব্যোম" অর্থাৎ বিবিধ প্রাণীদের রক্ষাধিকারে নিযুক্ত হয়ে সর্ব জগতের রচয়িতা পরমেশ্বর কে প্রজাদের সবার উত্তম বা সবার সবার আদি উৎপাদক কারণ, মেঘের সমান সুখের উৎপাদক, বরুন অর্থাৎ বরণ করার যোগ্য সুখের মূল কারণ দ্বিপদী এবং চতুষ্পদী পশুদের মধ্যে শরীরকে লোম আদি দ্বারা আবৃতযুক্ত এই " ঊর্নায়ু " উল প্রদানকারী মেষ আদি জীবকে মেরো না। তোমাকে আমি বন্য উট এর উপদেশ করি। উহা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে শরীরের সুখকে প্রাপ্ত করো। তোমার পীড়াজনক প্রবৃত্তি, দাহকারী পীড়দায়ক জীবের প্রাপ্ত হোক।এবং তোমার দুঃখদায়ী ক্রোধ তাহার প্রাপ্ত যাদের আমরা দ্বেষ করি।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
উপরিউক্ত মন্ত্রগুলি দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, বেদ কোন নির্দোষ পশু কে হত্যার উপদেশ করে নি।বরং উপদেশ করেছে, পশুস্ত্রাঁয়েথাঙ (যজুর্বেদ ৬।১১) অর্থাৎ পশুদের রক্ষা করো এবং তাদের বর্ধিত করো।কারন বেদ সর্বদাই কল্যাণময়।
নমস্তে

যজ্ঞ কেন করব?





যজ্ঞ সম্পর্কে বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ মানুষের ধারণা যে এটি একটি সেকেলে, আদিম মানুষদের অনুষ্ঠান, যেখানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবেশের দূষণ ঘটিয়ে বারোটা বাজানো হয়। অন্যদিকে কিছু পৌরাণিক উপাখ্যান পড়ে অনেকের এমন ধারণা হয়েছে যে এটি সম্পূর্ণই কুসংস্কার প্রসূত। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে যজ্ঞের মধ্যে যে গূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে তা বেশিরভাগেরই অজানা।


যজ্ঞ কি? যজ্ঞ হচ্ছে মহৎ উদ্দেশ্যে সাধিত শুভ কর্ম। যেখানে বলি দেয়া নিজের আত্মম্ভরিতাকে, স্বার্থপরতাকে এবং পাশবিকতাকে। যজ্ঞের দর্শন আমাদের শেখায় সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠাকে এবং তুলে ধরে এমন জীবন ব্যবস্থাকে যেখানে মানবীয় গুণাবলীকে রক্ষা ও এর আদর্শ সমাজে প্রচারিত করা হয়। এরকম কিছু যজ্ঞ হচ্ছে সেবা যজ্ঞ- যেখানে সমাজ সেবাই সকলের ব্রত, জ্ঞান যজ্ঞ- মানবসমাজে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রজ্বলনের ব্রত, প্রাণ যজ্ঞ- যেখানে জীবের প্রাণ রক্ষাই আমাদের ব্রত। সত্যি করে বলতে আমরা জেনে না জেনে অনেক যজ্ঞই করছি মনের অগোচরে।

আমরা সাধারণত যজ্ঞ বলতে বুঝি একটি কুণ্ডে আগুন জ্বালিয়ে মন্ত্র পাঠ করে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য আহুতি দেয়া। বৈদিক ধর্মে এমনি নিত্য আচরিত একটি যজ্ঞ হচ্ছে হবন বা অগ্নিহোত্র।

অনেক বস্তুবাদীই প্রশ্ন করতে পারেন অগ্নিহোত্র কি অর্থহীন আড়ম্বর নয়? মোটেও নয়, বরং এর মাঝে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়।

আমাদের এ জগতে শক্তির মধ্যে তাপ শক্তি ও শব্দ শক্তি অন্যতম। যজ্ঞে এই দুই শক্তিরই সম্মেলনে আমরা অর্জন করতে পারি শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা। যজ্ঞে বিভিন্ন পদার্থের দহন ঐ বস্তুর অন্তর্নিহিত সঞ্চিত শক্তির উন্মোচন ও পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়ার একটি উৎকৃষ্ট প্রক্রিয়া। অন্যদিকে যজ্ঞে উচ্চারিত মন্ত্রের কম্পাঙ্ক শক্তি বহন করে এক আধ্যাত্মিক প্রেরণা।




যজ্ঞে সমিধ হিসেবে যেসব দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে থাকে নানা সুগন্ধি পদার্থ, ওষধি বৃক্ষের কাঠ, পুষ্টিকর খাদ্য ইত্যাদি। আপনাদের মনে হতে পারে এসব দ্রব্য পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড প্রভৃতি উৎপন্ন হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বৈদিক কল্প ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের বিধি মোতাবেক সঠিক অনুপাতে জ্বালানী, দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেন এবং যজ্ঞকুণ্ড যদি শাস্ত্রীয় রীতি অনুসারে তৈরী করেন তবে কোনো বিষাক্ত গ্যাসই উৎপন্ন হবে না। যে কার্বন ডাই অক্সাইড যজ্ঞকুণ্ডে উৎপন্ন হবে তা যজ্ঞকুণ্ডের প্রবল উত্তাপে বাষ্পের সঙ্গে ক্রিয়া করে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন করবে যা যজ্ঞকুণ্ডের চারপাশের পরিবেশ সুগন্ধে পূর্ণ করে তুলবে। আর এই গ্যাস কেবল সুগন্ধিই নয়, বায়ুতে থাকা বিভিন্ন কীটাণু দমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ যজ্ঞের মাধ্যমে আপনি পাবেন দুর্গন্ধ মুক্ত স্বাস্থ্যকর এক পরিবেশ। আর যে অল্প পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে যাবে সেটি সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যাবে। যা একই সাথে বৃক্ষরাজির খাদ্য ও পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেনের যোগান দেবে। তাই যজ্ঞ কেবল যজ্ঞকারীর নয়, বরং সমগ্র পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

অনেকে বলতে পারেন যজ্ঞে ব্যবহৃত কাঠের জন্য তো প্রচুর বৃক্ষ নিধন করতে হবে। আপনাদের জন্য বলছি বৈদিক ঋষিগণ কেবল মৃত বৃক্ষের কর্তনেরই নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই সাথে মনু আদি মহর্ষিরা ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যজ্ঞের জন্য কোনো জীবিত বৃক্ষ কর্তনের প্রয়োজন নেই, বরং মৃত বা মৃতপ্রায় বৃক্ষের কাঠই যজ্ঞে সমিধারূপে ব্যবহৃত হবে।

বর্তমান পরিবেশ দূষণ ও রোগ মহামারীর যুগে যজ্ঞের আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড. হাফকিন বলেছেন, “ঘি এবং চিনি মিশ্রণ করে যজ্ঞে পোড়ালে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় তা বিভিন্ন রোগজীবাণু ধ্বংস করে।” প্রফেসর টিলওয়ার্ড বলেন, “চিনি মিশ্রিত হবিষ্যের পরিবেশ শোধনের শক্তি রয়েছে। এটি যক্ষ্মা, মিলস, বসন্ত প্রভৃতি জীবাণুনাশক।”

গায়ত্রী পরিবার আয়োজিত গোরখপুরে অশ্বমেধ যজ্ঞ চলাকালীন সময়ে “উত্তর প্রদেশ দূষণ রক্ষা বোর্ড” এর ডিরেক্টর ড. মনোজ গর্গ একদল বিজ্ঞানী নিয়ে বেশকিছু পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষার ফল “অখণ্ড জ্যোতি” সাময়ীকির সেপ্টেম্বর ’৯৭ সংখ্যাতে প্রকাশ পায়। যা যজ্ঞের ব্যাপক উপযোগিতা ফুটিয়ে তুলে। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যজ্ঞ সম্পাদনের পূর্বে সে স্থানে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩.৩৬ ও ১.১৬ ইউনিট এবং যজ্ঞ সম্পাদনের শেষে বিষাক্ত গ্যাস দুটির পরিমাণ কমে দাড়ায় যথাক্রমে ০.৮০ ও ১.০২ ইউনিট। বিজ্ঞানীর দল যজ্ঞকুণ্ডের কিছু দূরে অবস্থিত জলাশয়ের পানি পরীক্ষা করেও অভূতপূর্ব ফল লাভ করেন। তাঁরা দেখতে পান সংগৃহীত নমুনায় যজ্ঞের পূর্বে ব্যাকটেরিয়া ছিল ৪৫০০ এবং যজ্ঞের শেষে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে দাড়ায় ১২৫০। যজ্ঞাবশিষ্ট যে ছাই ছিল তাতে মিনারেল পদার্থের পরিমাণ পরীক্ষা করে উত্তর প্রদেশ কৃষির ডেপুটি ডিরেক্টর একে উত্তর মৃত্তিকা উর্বরকারক বলে মত দেন। ১৯৯৩-১৯৯৫ পর্যন্ত ২৭টি যজ্ঞভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যার প্রত্যেকটিই বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে যজ্ঞের উপযোগিতা ব্যাপকহারে সমর্থন করে।

আপনারা অনেকেই ভূপাল ট্র্যাজেডির কথা শুনেছেন, যেখানে বিষাক্ত এমআইসি গ্যাস নির্গমনের ফলে শতশত মানুষ মারা যায় এবং সহস্র মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল মাইলের পর মাইল। ৪মে ১৯৮৫ এর দৈনিক “দ্যা হিন্দি” এর একটি প্রতিবেদন সকলকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “দূষণ প্রতিরোধে বৈদিক উপায়।” যেখানে বলা হয় ওই গ্যাস প্ল্যান্টের খুব নিকটবর্তী সোহান লাল খুশওয়া এর পরিবারের কোনো সদস্যই ওই ঘটনার ফলে মৃত্যু তো দূরে থাক অসুস্থই হয় নি। কারণ কি? অগ্নিহোত্র। হ্যাঁ একমাত্র এই পরিবারটিই সেখানে নিয়মিত বৈদিক অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করত। যার ফল স্বরূপ এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পায় পরিবারটি। আর এই ঘটনা পরিবেশ দূষণ রোধে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের কার্যকারিতা পুনরায় প্রতিপাদন করল।

তাই তো বৈদিক ধর্ম ঘোষণা দিয়েছে “য়জ্ঞো বৈ শ্রেষ্ঠতম কর্মম্”। ভগবানও বলেছেন যজ্ঞের মাধ্যমে মনীষিরা কেবল নিজের চিত্ত শুদ্ধিই ঘটায় না, সেই সাথে ভূত অর্থাৎ পরিবেশের শুদ্ধতাও বজায় রাখে। আর কলির এ দুঃসময়ে আমরা যজ্ঞবিমুখী হয়ে কেবল অন্ধকারেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। তাই আমাদের উচিত পুনরায় অগ্নিহোত্র আদি যজ্ঞ আয়োজনের মাধ্যমে সনাতনের স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়া। যেদিন ঘরে ঘরে সুবাসিত অগ্নিহোত্রের গন্ধ ছেয়ে যাবে এবং মুখে মুখে গায়ত্রীর পবিত্র ধ্বনি উচ্চারিত হবে সেদিনই কলি হবে পরাহত এবং ফিরে আসবে সনাতনের স্বর্ণযুগ।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

রেফারেন্স সমূহ:
১. ‘The Integrated Science Of Yagya’ by Dr. Rajani R. Joshi, Yug Nirman Yojana, Gayatri Tapobhumi, Mathura
২. ‘Agnihotra Vyakhya’, Arya Pratinidhi Sabha, Ajmer
৩. ‘Fumigating Substances used in Yagna’- Procedings of Ashwamedha Yagna held in Montreal, Canada
৪. ‘Does Yagna Add to the Prevalent Pollution’- Procedings of Ashwamedha Yagna held in Montreal, Canada
৫. Selected Articles from Akhand Jyoti. Publisher Akhand Jyoti Sansthan, Mathura
৬. ‘Agnihotra: The Message of Time’ by Dr. Madhukar P. Giak-wad, National Symposium on Unification of Modern and Ancient Sciences held in Andheri, Mumbai on April 30, 1995
৭. ‘The New Age Force of Gayatri’ by Ashok N. Raval, Bhartiya Vidya Bhavan, Mumbai

পবিত্র বেদের বিখ্যাত মহামৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র





পবিত্র বেদের বিখ্যাত মহামৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র (ঋগবেদ ৭.৫৯.১২)

ওঁ ত্র্যম্বকম্ য়জামহে
সুগন্ধিম্ পুষ্টি বর্ধনম্

উর্বারুকমিব বন্ধনান্
মৃত্যুর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ(ম অমৃতাৎ)ওঁ

ত্র্যম্বকম(Tray ambakam) -rudra that has three visions
যজামহে(yajamahe) - I adore you or praise you
সুগন্ধিম(Sugandim) - that is with sweet smell
পুষ্টি বর্ধনম(Pusti vardhanam) - that increases my health
উর্ব(Urva)- large or big or vast or deadly

অরুকুম(Arukum) - disease
বন্ধনান(Bandhan an)- the root
উর্বারুকমিব বন্ধনান(Urvaruk am bandhanan) - the root of deadly diseases
মৃত্যুর্(Mrityur ) - death
মুক্ষীয়(Mukshi ya)- liberate
মৃত্যুর্ মুক্ষীয়(mrityu r mukshiya) - liberate from death
ম(Ma)- not
অমৃতাৎ(Amritat) - immortality
মামৃতাৎ(Mamritat )- not from immortality

হে রুদ্র পরমেশ্বর, তোমার বন্দনা করি। তুমি জন্ম, জীবন ও মৃত্যুত্রয়ীর জ্ঞানদৃষ্টির অধিকারী। তুমি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুন্দর পরিবেশ ও পুষ্টিকর খাদ্যের যোগানদাতা। তুমি সকল ভয়ঙ্করব্যাধি হতে ত্রাণকারী। আমাদের মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তিদান কর, অমৃতত্ত্ব থেকে নয়।
Oh rudra, I adore you, you have three visions(of birth, life and death). You nourish me with good smell ( good condition). Destroy the deadly diseases, liberate me from death not from immortality.

কাবুলিওয়ালা বাঙলি বউ


ভুল তো মানুষই করে....।
কুকুর ছাগল... গাছপালা কি আর ভুল করে?
- তেমনি আমাদের আদুরে মেয়েরাও ভুল করে। কিন্তু এই জন্যে পুরো দোষটাই কি তাদের দেওয়া উচিৎ...?
- একবার ওই হতভাগ্য মেয়েগুলোর জায়গায় নিজেদের কল্পনা করে দেখুন তো....!
.... আমি ওদের দোষ দেই না। ওদের যন্ত্রনা বুঝি, .. অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করি। খুব কাছ থেকে ওদের সঙ্গে মিশে, তাদের সে তীব্র যন্ত্রনার সাক্ষী হয়ে যা বুঝেছি,... তাতে ১২ আনা দোষ তো আমাদের নিজেদেরই...। কাউকে দোষ দেওয়ার আগে একবার নিজের দিকে তাকাবেন না?
আপনারা শুধুই মেয়েগুলো'র পালানোটা দেখেন। অথচ কেন পালায় সেটা দেখবেন না..??
সম্প্রতি আমারই করা "লাভ জেহাদের মর্মান্তিক পরিণতিঃ মৃত্যু হল অহনার ...." শীর্ষক ভাইর‍্যাল পোষ্টটি'তে আপনাদের অধিকাংশের কমেন্টে ভাষার দশা দেখে এই কথাগুলো বলতে আমি বাধ্য হচ্ছি ... ।।
ছোট থেকে আমাদের মেয়েরা মা বাবার থেকে কি শেখে..?
- আমরা যাকে পুরোহিত বলি... ওরা তাকে ইমাম বলে। আমরা যেমন উপোষ করি, ওরা তেমন রোজা রাখে। আমাদের মন্দিরে দেবতা থাকেন... ওদের মসজিদে থাকেন আল্লা,... যদিও ব্যাপারটা একই। আমরা যেমন মন্ত্র পড়ি... ওরা পড়ে নামাজ। আমাদের গিতা-ই ওদের কোরান.... ইত্যাদি ইত্যাদি...।
- এটা দেখবেন না?
স্কুলের থেকে তারা শিক্ষা পায়... ধর্ম যার যার নিজের.. কিন্তু সবার উপরে মানুষ সত্য। রোগের মত অপরাধীরও কোন ধর্ম নেই। আমাদের সবার সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার অনুভূতি অভিন্ন। চোখের জল আর রক্তের রঙ... সবার সমান।
- এটা দেখবেন না?
রাজনীতির দাদা দিদিদের ফাটা কাঁসি অনবরত তাদের কানে সেকুলারিজমের সুধাবর্ষন অব্যাহত রেখেছে... এই বলে যে,... হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই। বরাবর তারা শুনে আসছে,... মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।
- সেটা দেখবেন না?
মন্দিরে বা মঠে গিয়ে তারা শোনে.... ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম... সবকো সম্মতি দে ভগবান। যত মত... তত পথ..। যে রাম - সেই রহিম, ... যে কৃষ্ণ - সেই করিম ..! কোরানের "ক" - ও না জেনে সেখানে যারা সর্বধর্মসমন্বয়ের ভাঙ্গা রেকর্ড অষ্টপ্রহর বাজিয়ে চলেছেন ...
- এটা দেখবেন না?
ইতিহাসের বইতে তারা "আকবর দ্যা গ্রেট" পড়ে।.. যোধা আকবর পড়ে। শেখে ৮০০ বছর ধরে মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের কত বন্ধু ছিল। কিন্তু ২০০ বছরেই বিদেশী ব্রিটিশরা ছিল কেমন শত্রু !
- এটা দেখবেন না?
সাহিত্যের পাতা উল্টিয়ে তারা দেখে.... সর্বত্রই জাত পাতের নামে হিন্দুদের বজ্জাতি। অথচ মুসলমান ধর্মে সেখানে সাম্যের ছড়াছড়ি। যেখানে সর্বত্রই হিন্দুরা কেমন মুসলমানেদের হেয় চোখে দ্যাখে,.. এত সত্ত্বেও মুসলমানেরা কেমন প্রান দিয়ে হিন্দুদের ভালোবাসে। হিন্দু মেয়েদের মুসলমান ছেলেরা কতটা সম্মান করে.. ইজ্জত দেয়।
- এটা দেখবেন না?
লিটিল ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকা এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যম থেকে তারা জানে.... পরিবার ও সমাজের ঊর্ধে উঠে হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হিন্দু মেয়েদের সঙ্গে মুসলমান ছেলেদের প্রেম কাহিনী কেমন ভাবে অক্ষয় অমর হয়। আরও শেখে,.... হিন্দু পরিবারের দজ্জাল বাবা/মা পরিশেষে তাদের মুসলমান জামাইকে কিভাবে সাদরে বরন করে নেন।
- এটা দেখবেন না?
সিরিয়াল বা বিভিন্ন টক-শো গুলো থেকে তারা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে যে.... হিন্দু মেয়েরা মুসলমান পরিবারে গিয়ে কত সুখী ঘরকন্না করছেন।... এমনকি মুসলমান ঘরে রীতিমত সিংহাসন পেতে ঠাকুর পুজা করে তার প্রসাদ বিতরনের বিশদ বিবরন তাদের সুকোমল মনে যে কেমন ভাবে সম্প্রীতি'র পুলক জাগায়....
- সেটা দেখবেন না?
আর রূপালী জগতের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো... শতকরা ৯৯% চলচ্চিত্রেই দেখা যায় মুসলমানের প্রেমে কেমন হিন্দু মেয়েরা হাবুডুবু খাচ্ছে! আর তার উপর খান ভাইয়াদের হিন্দু স্ত্রী প্রীতি এবং তাদের সে গভীর দাম্পত্য প্রেম তাদের মনে যে গভীর রেখাপাত করে,...
- সেটা কি একবারও দেখবেন না?
সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবে তারা এটাই শিখে আসে যে, মেয়েদের জন্মই হয় অপরের ঘরে যাবার জন্য। এবং তারা এটাও শিক্ষা লাভ করে যে,... স্বামীর ধর্ম কিংবা টাইটেলই হল স্ত্রীর সত্য ভবিষ্যৎ ....। সর্বোপরি বন্ধুবান্ধব থেকে ঘনিষ্ঠমহল... যখনই কেউ জানতে পারে যে, মেয়েটি কোন মুসলমানের পাল্লায় পড়েছে,....ব্যাস - সর্বত্রই অভিনন্দনের অতিসহ্যে তাকে ভরিয়ে দেওয়া হয়....
- সেটাও কি দেখবেন না?
অথচ....
তাকে যে ভালোবেসে কেউ সাবধান করবে,.. তেমন কি কেউ আছে... ?
উপরন্তু বয়ঃসন্ধি কালে তাদের বেহিসাবি চলার প্রবনতা.... সব কিছু উল্টোপাল্টা করে দেয়। এটা তো বয়েসের ধর্ম। এই বয়েসে কি কোন বাধা বাগ মানতে চায়? না,... বরং জলের ধারা যেমন নিম্নগামী, তেমনি দুঃসাহসীক গোপনীয় কিছু নিষিদ্ধ মনঃস্তত্ব অনবরত তাদের সংগোপনে হাতছানি দিতে থাকে। শারীরিক ও মানসিক জৈবিক চাহিদা ... একবার হলেও নিবিড়ে পেতে চায় পুরুষের বেপরোয়া কামনার উষ্ণতার আস্বাদ ...। ওদিকে হাতের স্মার্টফোনের পর্নোর ধারাপাত... আর সোশ্যাল মিডিয়া সহ ইন্টারনেটের সর্বত্র কানাগলি'র ছড়ানো ছিটানো নিষিদ্ধ আহ্বান...
- সেটা অনুভব করবেন না?
... তারা দেখতে পায় না... নলিয়া খালি, কালিয়াচক, দেগঙ্গা....জানতে পারে না... বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের ইতিকথা,....আর যেটুকুও জানিতে পারে, তাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করে, ... সব মুসলমান খারাপ নয় জাতীয় তোতা-তত্ত্বের আমদানী করে। তাদের জানতে দেওয়া হয়না দেশভাগের ইতিহাস,... তাদের পিতৃপুরুষের এদেশে উদ্বাস্তু হয়ে পালিয়ে আসার করুন কাহিনী।
- সর্বোপরি তারা কোনভাবেই জানতে পারে না, প্রতিদিন এই বাংলার বুক থেকে নিদেন পক্ষে যে শতাধিক হিন্দু মেয়ে,... ছলে বলে কৌশলে মুসলমানের ঘরে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়... তাদের ভবিষ্যৎ কি? খুব সবাভাবিক ... সেই সকল তাদেরই পুর্বসূরিদের পরিণতি উত্তরসূরিদের কাছে মৃত্যুপরবর্তী অবান্তর অধ্যায়ের মতই কল্পনার অতীত।
... সেই খবর জানানোর মত যে কেউ নেই...
- সেটা দেখবেন না?
যদিও বা তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপন ভুল বুঝতে পেরে, ভাগ্যের সুপ্রসন্নতায় সুযোগ বুঝে পালিয়ে এসে, আবার নিজের সমাজে মিলে যেতে চায়,... আপনাদের কি জানা আছে,... তারা ঠিক কতটা সামাজিক প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়..??
অন্যদিকে চাষের জমি যেখানে এতটাই প্রস্তুত, সেখানে লাভ জেহাদি'রা যথেচ্ছ চাষ করে তাদের সোনার ফসল ঘরে তুলবে,... এতে আর আশ্চর্য কি? এর উপরে রয়েছে নারীবাদীদের অহেতুক উস্কানি ! রঙ মশালে বারুদ ঠাসার খেলা ... !!
বাঘ যেমন গোটা ভেড়ার পালের বদলে যে কোন একটি নির্দিষ্ট ভেড়াকে টার্গেট করে, ওরাও তেমনি আমাদের মেয়েগুলোকে নিশানা করে,... এবং সেই শিকার ধরার জন্যে তারা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে, যে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে তাদের মোটেও বেশি সময় লাগে না। পরিশেষে বলি... যে সাপের কামড় খায়নি,... তার জ্বালা সে বুঝবে কি ভাবে?
.... এর বাইরেও হয়তো অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেল...।
... তবু বলি, লাভ জেহাদের ব্যপকতা সম্পর্কে আপনাদের লব্ধ গতানুগতিক ধারনার তাই আজ আমূল পরিবর্তনের সময় এসেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দুটো গালাগাল দেওয়া বা বেশ হয়েছে... ভালো হয়েছে গোছের গায়ের ঝাল মেটাবার মত কিছু মন্তব্য যে নেহাতি নিষ্প্রয়োজন এবং অপ্রাসঙ্গিক তাই শুধু নয়... ভীষন ক্ষতিকারকও বটে ! কারন এই শূন্যতা অপূরণীয়। ... এই লোকসান অপরমেয়...!!
- কারন মেয়েটা আমার সমাজের। অতয়েব আর যাই হোক বা না হোক, মেয়েটিকে/মেয়েগুলোকে আমাদের সমাজে ধরে রাখতে না পারার ব্যার্থতা বা অপদার্থতার দায়ভার কি আদৌ আমরা এড়াতে পারি?
তাদের সম্যক বিপদ সম্পর্কে বোঝাতে না পারার দৈনতা কি আমাদেরই অক্ষমতার পরিচায়ক নয়?
.... আর তাই যদি হয়, তবে আমরা নিজেদের ১০০% নির্দোষ বলে দাবী করি কোন মুখে..??
- কথাটি অবশ্যই একবার হলেও ভাবতেই হবে....।

হিন্দু নারীর কি দ্বিতীয় বিবাহ করার অধিকার আছে?


উত্তর- হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।
ঋগ্বেদ ১০.১৮.৭-৮ এ স্বামীর মৃত্যুতে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল বা সামাজিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন বিধবা মহিলাকে পুনর্বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চাহিদা পুরন করতে না পারলে বা স্বামী যদি সন্তান উত্‍পাদনে অক্ষম হয় তবে স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

স্মৃতিশাস্ত্র পরাশর সংহিতায় বলা হয়েছে-
"নষ্ট মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ।
পচস্বাপত্সু নারীরাং পতিরন্যো বিধোয়তে।।"
(পরাশর সংহিতা ৪.৩০)
অনুবাদ- নারীর যদি স্বামী মারা যায়, তার স্বামী যদি গোপনে সন্ন্যাস গ্রহণ করে, স্বামী যদি নিখোঁজ হয়, স্বামী যদি সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়, স্বামী যদি অধার্মিক ও অত্যাচারী হয় তবে স্ত্রী এই স্বামী ছেড়ে পুনরায় বিবাহ করতে পারে ।

উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে হিন্দু নারী দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন। তবে তার পূর্বে বর্তমান স্বামীকে সংশোধন বা প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত সময়কাল অপেক্ষা করতে হবে। তাতেও স্বামী নিজেকে সংশোধন না করলে, নিখোঁজ থেকে ফিরে না আসলে বা নপুংসকতা দূর না হলে স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে।

আসুন আজ আমরা জেনে নেব হিন্দুধর্মে গো হত্যা নিষিদ্ধ কেন ?


হিন্দুধর্মে গো হত্যা নিষিদ্ধ নয়, পূর্বে
হিন্দুরা গো মাংস ভক্ষণ করত এসব কথা
গুলি বলে হিন্দুদের বিভ্রান্ত করতে
ব্যস্ত ধর্মান্ধরা ।আসুন আজ আমরা
জেনে নেয় হিন্দুধর্মে গো হত্যা
নিষিদ্ধ কেন ?
হিন্দু ধর্মালম্বীরা গরু হত্যা করে না
এবং গরুর মাংস খায় না। কিন্তু ভিন্ন
ধর্মালম্বীরা বলে তোমাদের বেদে
গোহত্যা নিয়ে কোন কথা নাই ....
চলুন তাহলে গোহত্যা এবং গরুর মাংস
আহার নিয়ে বেদ কি বলছে দেখি.…
1) গো হত্যা জঘন্যতম অপরাধ, ইহা মানুষ
হত্যার সমতুল্য। যারা এই রকম তারা
অবশ্যই শাস্তিযোগ্য(ঋগবেদ ৭।৫৬।১৭)
2) গো মাতাকে কোন কারণে, কোন
অবস্তাতে হত্যা করা যাবে না। তাকে
বিশুদ্ধ জল, শ্যামল ঘাস দিয়ে পালন
করবে যার মাধ্যমে তোমরা ধন সম্পদ ও
জ্ঞান লাভ করতে পারবে (ঋগবেদ ১।
১৬৪।১৪০, অথর্ববেদ ৩।৩০।০১)
3) গো হত্যা করো না এবং গরু হলো
অদিতি(যাকে টুকরো করে ভাগ করা
যাই না) ঋগবেদ ৮।১০১।১৫
4) গরু আমাদের সুস্বাস্ত্য ও উন্নতি
আনে (ঋগবেদ ১।১৬৪।২৭)
5) গরুর জন্য সুপেয় জলের ব্যবস্তা থাকা
উচিত(ঋগবেদ ৫।৮৩।৮)
তাছাড়া ঋগবেদের ১০।৮৭।১৬ এবং
অথর্ববেদের ১।৬৪।৪ তে মানুষ, ঘোড়া ও
গো মাংস আহারকারীদের কঠোর
শাস্তির কথা উল্লেখ আছে।ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন গো সেবক।আমাদের
উপাস্য গোবিন্দ,গন্তব্য গো লোক আর
তীর্থ গোমূখ নির্গত গঙ্গা।সব কিছূ গো
সংশ্লিষ্ট।সকল বৈদিক কর্ম পঞ্চগব্য
ছারা অকল্পনীয়।তাই গোমাতা
আমাদের শ্রদ্ধেয়া ।
6) প্রার্পায়াতু শ্রেষ্ঠতমায় কর্মন
আপ্যাযদ্ধম... অঘ্ন্যা যজমানস্য পশুন্
পাহি।
(যজুর্বেদ ১.১)
অনুবাদ-হে মনুষ্য প্রার্থনা কর যাতে
সবসময় তুমি মহত্ কার্যে নিজেকে
উত্সর্গ করতে পার,পশুসমূহ অঘ্ন্যা
অর্থাত্ হত্যার অযোগ্য,ওদের রক্ষা কর।
7) "পাষণ্ড তারা যারা প্রানীমাংস
ভোজন করে।তারা যেন প্রকারান্তরে
বিষ ই পান করে।" -ঋগ্বেদ ১০.৮৭.১৬
8) অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা
নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।
(অথর্ববেদ ১০.১.২৯)
অনুবাদ-নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম
অপরাধ।কখনো মানুষ,গো-অশ্বাদিদের
হত্যা করোনা।
9) Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho
vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba
shuddhamudakamaachar antee
(Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or
Atharv 9.10.)
The Aghnya cows – which are not to be
killed under any circumstances– may keep
themselves healthy by use of pure water and
green grass, so that we may be endowed
with virtues, knowledge and wealth.
বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে
গরুর সমপদ ।
আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা
উচিত নয় । অহি মানে যার
গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় ।
অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা
উচিত নয় ।
(Source: Yaska the commentator on
Nighantu)
এখানে স্পষ্ট বলা আছে, গো-হত্যা করা
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বলবে, হত্যা করতে নিষেধ করেছে,
খেতে তো নিষেধ করে না !!!!!
যেখানে হত্যা করতেই নিষেধ করা
হয়েছে সেখানে ভক্ষণ করার প্রশ্নই
ওঠে না ।
এছাড়া আমরা জানি,
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় কেবল গরু নয় আমিষ
খাবার গ্রহণই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা
আমিষ খাবার গ্রহণ করে তাদের
পিশাচের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ।
আমরা জানি, আমিষ খাবার শরীরের
জন্য যেটুকু উপকারী তার চেয়ে বহুগুণ
ক্ষতিকর । এছাড়া নিরামিষ খাবার
আমিষের চাহিদা
পূরণে সক্ষম । বর্তমানে শুধু হিন্দু নয়
অনেক বিধর্মীও কেবল নিরামিশ খাদ্য
গ্রহণ করে থাকে এবং এর হার দিন দিন
বেড়েই চলেছে ।

ব্যাসদেব কে? কি তার জন্ম বৃত্তান্ত?



কিভাবে ব্যাসদেব বেদগ্রন্থ ও আটারো পুরাণ রচনা করলো কি তার পূর্ণ ইতিহাস ?
সনাতন ধর্মের গ্রন্থ ও পুরাণগুলো গদ্য আকারে না হয়ে কেন শ্লোকে রচিত হলো?
(ব্যাসদেবের জন্ম ও তার জীবন বৃত্তান্ত পর্ব ):-
মহামুনি বশিষ্ঠের পুত্র শক্তি। শক্তি যখন কল্মাষপাদের হাতে মৃত্যু বরণ করলেন, তখন তাঁর একমাত্র পুত্র পরাশর তখন মাতৃগর্ভে। জন্মের পর থেকে মাতা অদৃশ্যন্তী এবং পিতামহ ঋষি বশিষ্ঠ দেবের রক্ষণাবেক্ষেণে পরাশর ক্রমে মহাপন্ডিত হয়ে উঠলেন। একদিন পরাশ

র মুনি নদীপার হবেন - খেয়া নৌকা চালাচ্ছে মৎস্যগন্ধা নামে এক ধীবর-পালিত কন্যা (ধীবর একজন জেলেদের রাজা, একদিন ধীবর নদীতে মাছ ধরতে যাই আর যে মাছগুলো ধরেছিলেন তার একটি মাছের ভেতরে এক কন্যা শিশু পায় তখন ধীবর সেই মেয়েটির নাম রাখে মৎস্যগন্ধা)। তখন পরাশর মুনি বলেন মাতা আমি যমুনার ওপারে যাব আমাকে কি পার করে দিবেন? মৎস্যগন্ধা বলেন হে মুনিবর আসুন। পরাশর নৌকায় উঠে বসলেন। কিছুটা দূর যাওয়ার পর পরাশর মুনি বললেন মাতা আপনার নৌকায় মাছের গন্ধ আসছে কেন? তখন মৎস্যগন্ধা বললেন মুনিবর মাছের গন্ধ আমার শরীর থেকে আসছে। পরাশর জিজ্ঞাসা করলো, কিভাবে? মৎস্যগন্ধা বললেন , আমার জন্ম হয়েছিল মাছের ভেতরে আর জন্ম লগ্ন থেকে আমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ আসছে। পরাশর মুনি বললেন মাতা আপনি নদী পারে আমাকে সহায়তা করেছেন, আপনি যদি চান আপনার এই উপকারের ফলস্বরূপ আমি আপনার জন্ম লগ্ন থেকে অর্জিত করা এই মাছের গন্ধ আমার যোগ তপস্যা শক্তি তেজর্ভূষী (তেজর্ভূষী বলতে ধোঁয়া সংস্কৃত ভাষায় ধোঁয়াকে র্ভূষী বলে) দ্বারা দূর করতে পারি। মৎস্যগন্ধা তখন বললেন, আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ হবো। পরাশর মুনি বললেন, কিন্তু আপনি আমার তেজর্ভূষী ধারন করতে অক্ষম হইবেন যার ন্যায় আপনার কোলে এক পুত্র সন্তানের আবির্ভাব হবে। তখন মৎস্যগন্ধা বলেন, হে মহর্ষি আমি একজন কুমারী মেয়ে। পরাশর মুনি বললেন, এতে আপনার কুমারীত্বের কোনও ক্ষতি হবে না। মৎস্যগন্ধা তখন আর চিন্তা না করে বললো ঠিক আছে মহর্ষি। অতঃপর পরাশর মুনি বললেন মাতা সামনে একটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছে ঐখানে নৌকা স্থির করুন, অতঃপর মৎস্যগন্ধা যমুনার মধ্যেবর্তী সেই তীরে নৌকা স্থির করলেন। নৌকার একপারে মৎস্য গন্ধা অন্য পারে পরাশর অবস্থিত ছিলেন। তত্ক্ষণাত্ মহর্ষি পরাশর নৌকার ওপার থেকে তপস্যা শক্তি দ্বারা তেজর্ভূষী উৎপক্তি করলেন এবং পরাশরের কল্যাণে ঐ কন্যার গায়ের মৎস্যগন্ধ দূর হলো-তখন তাঁর নাম হলো পদ্মগন্ধা। কিন্তু পদ্মগন্ধার কোলে এক পুত্রের আবির্ভাব হয়, তখন পরাশর ঐ পুত্রের নামে রাখে কৃষ্ণ। যমুনার মধ্যেবর্তী এক দ্বীপে জন্ম গ্রহন করেছেন ব'লে তাঁর অপর পরিচয় হলো 'দ্বৈপায়ণ'। মৎস্যগন্ধা ঐ পুত্রসন্তানকে নিয়ে ধীবর রাজ গৃহে চলে যায়। পদ্মগন্ধার কোলে নবজাতক দেখে ধীবর প্রশ্ন করলেন পুত্রী তোমার কোলে এই শিশু কোথায় থেকে এলো? পদ্মগন্ধা তখন বিস্তারিত খুলে বলে, কিন্তু ধীবর রাজ বলেন পুত্রী তুমি কুমারী এই শিশু তোমার কাছে থাকলে তোমার বিবাহ অসম্ভব। তখন পদ্মগন্ধা বলল পিতা আমি আর কি করতে পারতাম? ধীবর রাজ বললো, চলো পুত্রী যার শক্তিতে এই শিশু আবির্ভূত সেই কোনও সমাধান দিবে। অতঃপর ধীবর রাজ ও পদ্মগন্ধা পরাশর মুনির আশ্রমের উদ্দেশ্য প্রস্থান করলেন। আশ্রমে গিয়ে ধীবর রাজ মহর্ষি পরাশর কে বোঝালেন ও পদ্মগন্ধা বললেন, মহর্ষি আমার এই পুত্র সন্তান কে আপনার রক্ষণাবক্ষেণে রাখুন তাকে আপনার মতো একজন মহর্ষি মহাপন্ডিত হিসেবে গড়ে তুলুন। হে মহর্ষি আমি নিরুপায় আমার এই সন্তান আমার কাছে থাকলে আমার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তখন মহর্ষি পরাশর বলে দাও মাতা, ঐ পুত্র হস্তান্তর করার পর পদ্মগন্ধার নাম হয় সত্যবতী (পরবত্তী কালে হস্তিনারাজ শান্তনু এই সত্যবতীকেই বিয়ে করেছিলেন)( ব্যাসের জন্ম বৃত্তান্ত কথা সমাপ্ত )
(ব্যাসদেবের জীবন বৃত্তান্ত পর্ব) :-
দ্বৈপায়ণ ক্রমে ক্রমে বড় হয়ে উঠেছে কিন্তু তাঁর খেলার মতি বেশি। এ নিয়ে মহর্ষি পরাশর খুব চিন্তিত দ্বৈপায়ণকে কিভাবে পাঠ্যসূচি মনোযোগী করা যায়, এমন কি মহর্ষি বহুবার বোঝাই কিন্তু দ্বৈপায়ণ কিছুতেই বুঝতে রাজি নই। লেখাপড়ায় দ্বৈপায়ণ সম্পূর্ণ অমনোযোগী। দ্বৈপায়ণ যখন আটবছর বয়সী তখন একদিন মহর্ষি পরাশরের পাঠশালায় সব ছাত্ররা যখন জ্ঞান পাঠে মগ্ন তখন মহর্ষি পরাশর দেখলেন দ্বৈপায়ণ ক্রিয়াকর্মে মগ্ন,অতঃপর মহর্ষি দ্বৈপায়ণকে পাঠশালা থেকে তাড়িয়ে দিলেন। মন খারাপ করে দ্বৈপায়ণ আশ্রমের পুকুর ঘাটে গিয়ে বসেন। ঠিক সেই সময় ঐখানে আশ্রমের নারীরা পুকুর থেকে জল মাটির কলসী ভর্তি করে একটা স্থানে শান্ বাধানো(অর্থাৎ পাথরের পাকা ঘাট) ঘাটে রাখে সেখান থেকে আরেক নারী কলসী তুলে নিয়ে যায়। এভাবে (দীর্ঘদিন) দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে। যখন নারীরা পুকুর থেকে চলে যাই তখন প্রায় বেলা শেষ, দ্বৈপায়ণ তখন হাতমুখ দৌত করার জন্য ঘাটে নামে। হঠাৎ দ্বৈপায়ণের দৃষ্টি পরে পুকুর ঘাটের উপর, তিনি দেখলেন শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হয়েছে। তখন তিনি ঐ ঘাট স্পর্শ করে দেখলেন, আর গভীর ভাবে চিন্তা করলেন সামান্য মাটির পাত্রের র্ঘষণে যদি শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হতে পারে, তাহলে পুনঃ চেষ্টায় আমার জড় বুদ্ধি দূর করে পাঠশালায় অন্য সব শিক্ষাথীর্দের মতো জ্ঞানী হতে পারবো না কেন। দ্বৈপায়ণ তত্ক্ষণাত্ আশ্রমে ফিরে গিয়ে জ্ঞান পাঠে যোগ দেয়। মহর্ষি পরাশর দেখে দ্বৈপায়ণ ফিরে এসে জ্ঞান পাঠে যোগ দিয়েছে। সেদিন থেকে শুরু হয় পাঠ্যক্রম আর ক্রমেশে দ্বৈপায়ণ পাঠশালায় সর্ব শ্রেষ্ঠ শিক্ষাথীর্র গৌরব অর্জন করে। পূর্ণ জ্ঞান অর্জন সমাপন করার পরে দ্বৈপায়ণকে মহর্ষি পরাশর ব্যাস উপাধি প্রদান করে। সেদিন থেকে তাঁর নাম হয় 'কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ ব্যাসদেব'। কিছুদিন পর ব্যাসদেব যোগ তপস্যায় লিপ্ত হয় এবং কঠোর তপস্যা করে। তপস্যায় ব্যাসদেব পূর্ণ রুপে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করে এবং নিজেকে ত্বত্ত জ্ঞানে জ্ঞানান্নীত করে মহাজ্ঞানী স্বীকৃতি অর্জন করে।
(দ্বৈপায়ণ থেকে ব্যাসদেব নামে পরিচিতি পর্ব সমাপ্ত)
(সনাতন ধর্মের গ্রন্থ গদ্য আকারে না হয়ে শ্লোকে কেন লিপিবদ্ধ হলো তার পূর্ণ বিবরণ):-
ব্যাসদেব তপস্যা পূর্ণ করে ফেরার প্রায় পনেরো বছর পর, একদিন ব্যাসদেব একটি যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন। তিনি দেখলেন অত্র যজ্ঞানুষ্ঠানে সকল ভক্তরা অজ্ঞের মতো বসে আছে আর ঋষিরা যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। ব্যাসদেব নিজের ভেতরে এইটা অনুভব করলো যে, সনাতন সমাজের ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,শুদ্র,বৈশ্য সবাই ধর্ম পালনে তৎপর হইলেও প্রকৃত ধর্মের জ্ঞান সম্পর্কে অনবিজ্ঞ তার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধর্মের নিয়ম, শৃঙ্খলা, অনুশাসন ও জ্ঞানবাণী ঋষিদের মুখাশ্রীত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তখন তিনি চিন্তা করলেন যদি এই জ্ঞানবাণী ঋষি সমাজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সনাতনী সমাজ বিলুপ্তির পথে দাঁড়াবে। ধর্ম নামক শক্তির কোন অস্তিত্ব থাকবে না, মানুষ অমানুষের আঁকার ধারণ করবে ও সৃষ্টির সেরা এই মানবজাতি হিংস্র দানবের ন্যায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কেননা ধর্মের নিয়ম শৃঙ্খলা ও আদেশ উপদেশ ব্যতীত পৃথিবীর কোনও জাতি সুশৃঙ্খল, আত্মত্যাগী, ন্যায়পরায়ন ও সমাজবাদী শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে না। তখন তিনি মনস্থির করলেন ঋষি সমাজের মুখাশ্রীত ধর্মের এই জ্ঞানবাণী সনাতনী মানব সমাজ পর্যন্ত ধর্মের সংবাদ তথা আদেশ উপদেশ সরুপ পৌঁছাতে হবে। এরপর তিনি আশ্রমে ফিরে এলেন। সেইদিনের পর থেকে ব্যাসদেব সবসময় সর্বক্ষণ বিচলিত থাকতেন, তিনি শুধু এই চিন্তামগ্নের সমাধান খুঁজতেন। একদিন তিনি ভাবলেন ঋষিদের মুখাশ্রীত এই বাণীই হচ্ছে ধর্মের জ্ঞান কৌশল তথা নিয়মশাসন ও ধর্মের অনুপ্রেরণা। যদি এই অনুপ্রেরণা গ্রন্থ আকারে লিপিবদ্ধ করে মানব সমাজের জন্য উপস্থাপন করা যায়, তাহলে সনাতন ও সনাতনী সমাজ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। ব্যাসদেবের আশ্রমে ধর্মের গ্রন্থ লেখার কাজ শুরু করার চিন্তা করলো কিন্তু তিনি ভাবলেন শুধু মুখাশ্রীত বাণী লিপিবদ্ধ করলে কিভাবে হবে, তাহলে মানবজাতি ব্রহ্মাণ্ডের ত্রিদেব তথা মহাশক্তির পরিচিতি তাদের কার্যকলাপ ও তাদের সৃষ্টির সৃজনশীলতার গুণাগুণ উপলব্ধি করবে কিভাবে। ব্যাসদেব তখন আরো চিন্তামগ্ন হয়ে গেলেন, তিনি ভাবলেন যদি ঋষির মুখাশ্রীত বাণী ও মহাশক্তিদের গুণাবলি লিপিবদ্ধ করতে যায় তাহলে তো একার পক্ষে সম্ভব নয়। তার সমাধান খুঁজতে তিনি ব্রহ্মলোকের উদ্দেশ্য গমন করলেন। ব্রহ্মলোক গিয়ে তিনি ব্রহ্মদেবকে বললেন, হে সৃষ্টি গুরু আমি সৃষ্টির ইতিহাস তথা মহাশক্তির পরিচিতি গুণাগুণ ও কার্যকলাপ এবং ধর্মের নিয়ম শৃঙ্খলা ও অনুশাসন, অনুশীলন এবং অনুপ্রেরণা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করতে চাই এতে আপনার সুনির্দিষ্ট সাহায্য চাই। ব্রহ্মদেব বললেন অসাধারণ চিন্তা তোমার ঋষি ব্যাস, কিন্তু আমার খুবই দুর্ভাগ্য তোমার এই মহান কার্যে কোনরুপ সহায়তা করতে পারছি না। ব্যাসদেব বললেন হে পিতা, আমি কিভাবে আমার কার্য সিদ্ধি করব? ব্রহ্মদেব বললো ঋষি ব্যাস তুমি বৈকুণ্ঠপতির কাছে যাও তিনিই তোমাকে পথ দেখাবেন। ব্যাসদেব তখন বৈকুণ্ঠের উদ্দেশ্য গমন করলেন। বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে সেই বাক্য বললেন। বিষ্ণুদেব বললেন ঋষি ব্যাস, আপনি এক মহান কার্য সম্পাদনা করতে যাচ্ছেন যার ন্যায় সৃষ্টি তথা সৃষ্টির মানব আপনাকে শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করবে। অতঃপর বিষ্ণুদেব বললেন আপনার কার্যসিদ্ধির সমাধান আছে তবে সেটা আমার কাছে নয়। ব্যাসদেব প্রশ্ন করলো তাহলে প্রভু ব্রহ্মদেবের কাছে নেই আপনার কাছে নেই কার কাছে আছে? তখন বিষ্ণুদেব বললেন, কৈলাসপতি আদিদেব মহাদেবের কাছে। আপনি অতিশয় কৈলাস গমন করুন, অন্যতা মহাদেব দক্ষিণ কৈলাসে (দক্ষিন কৈলাস বলতে প্রেত কূল তপস্যা) প্রস্থান করবেন। ব্যাসদেব বিলম্ব না করে কৈলাস গমন করলেন। কৈলাসে গিয়ে ব্যাসদেব মাতা পার্বতী ও মহাদেবের সামনে উপস্থিত হইলেন, তিনি কিছু বলার আগেই মহাদেব বললেন, ঋষি ব্যাস অসাধারণ আপনার চিন্তা ভাবনা যা আজ পর্যন্ত কেউ অনুভব করেনি তা আপনি আঁকার দিতে যাচ্ছেন। ঋষি ব্যাস বললেন হে পরম পুজনীয় প্রভু আপনি অন্তর্লীন, আমার কার্যসিদ্ধির পথ সন্ধান হেতু আপনার শরণাপন্ন হওয়া, আমাকে পথ দেখান প্রভু। মহাদেব বললেন হে ঋষি ব্যাস অবশ্যই, মহাদেব তখন গণেশকে ডাকলেন আর বললেন পুত্র যাও ঋষি ব্যাসের সাথে। গণেশ বললো পিতা ঋষি ব্যাসের সাথে কোথায় যাব? তখন মহাদেব বললেন, ঋষি ব্যাস ধর্ম স্থাপত্যের জন্য কিছু গ্রন্থ রচনা করবেন আর তুমি তা লিপিবদ্ধ করবে। গণেশ বললো এই কাজের জন্য আমাকে কেন প্রয়োজন, এই কাজ উনি নিজেই করতে পারে? মহাদেব বললেন, পুত্র এ এক নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে যা ঋষি ব্যাসের পক্ষে একা রচনা করা ও লিপিবদ্ধ করা সম্ভবপর নয়, আর পুত্র এই কার্যে নিজেকে জড়িত করা সৌভাগ্যবান মনে কর কেননা যখনই এই শাস্ত্র গ্রন্থের নাম উল্লেখ হবে তখুনি তোমার নাম মানবজাতি শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করবে। ঋষি ব্যাসের সাথে তুমিও অক্ষয় হয়ে থাকবে। তখন গণেশ বললো চলুন ঋষিবর। ঋষি ব্যাস তখন গণেশকে নিয়ে তার আশ্রমে ফিরে আসিলেন। ঋষি ব্যাস গণেশকে নিয়ে অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে বসলেন। ঋষি ব্যাস প্রথমে ঋষিদের মুখাশ্রীত বাণী রচিত করবেন চিন্তা করলো, তখনই গণেশ বললো, ঋষিবর আমি লেখা শুরু করলে আর বন্ধ করতে পারবো না, যদি বন্ধ হয় তাহলে আর লিখিতে পারবো না। ঋষি ব্যাস তখন চিন্তায় পরে গেলেন, তিনি ভাবলেন পার্বতী নন্দন লেখা বন্ধ করলে আমার গ্রন্থ রচনা হবে কি করে আবার গণেশকে যদি স্থগিত করতে না পারি তাহলে রচনা চিন্তা করবো কিভাবে। এদিকে গণেশ বলছে শুরু করুন ঋষিবর। কিছুক্ষণ চিন্তা করে ঋষি ব্যাস মনস্থির করলেন আমি শ্লোক আকারে কিছু রচনা করবো তখন কি রচিত করলাম তা জানার জন্য গণেশের মনে আগ্রহ জাগবে। তখন রচিত শ্লোকের অর্থ বুঝতে বুঝতে আমি আরেকটি রচনা করতে পারবো। তখন ঋষি ব্যাস বললেন হে সিদ্ধিবিনায়ক শুরু করুন তবে, প্রথমে ঋষি ব্যাস একটি শ্লোক রচিত করলো অতঃপর গণেশ বললো, একটু অপেক্ষা করুন ঋষিবর। ঋষি ব্যাস বললো হে গণপতি? গণেশ বললো আপনি কি রচনা করলেন? ঋষি ব্যাস বললো, আপনি সিদ্ধিনাথ দেবকূলের পরম জ্ঞানী আমি যা রচিত করছি তা আপনার না জানার কথা নয়। আমি তো মনে করেছিলাম আমার কোন ভুল রচনা আপনি ধরবেন কিন্তু আমি কি রচনা করেছি তা আপনি জানতে চাইছেন এইটা আমার জন্য কোন পরীক্ষা নয়তো? তখন গণেশ বললো, ঠিক আছে আপনি যা রচনা করবেন তা আমি বোঝে উঠা পর্যন্ত আরেকটি বলবেন না। মনে মনে ঋষি ব্যাস বললো এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। গণেশ বললো আপনি কি চিন্তা করছেন? ঋষি ব্যাস বললো, না কিছু না, ঠিক আছে গণপতি আপনার যা ইচ্ছা। এভাবে ঋষি ব্যাস একটি শ্লোক রচিত করে আর গণেশ তা পূণাঙ্গ রুপে বুঝে উঠবার আগে আরেকটি শ্লোক রচিত করে। ক্রমাগত এভাবে ঋষি ব্যাস প্রথমে চারটি বেদ পরে আটারোটি পুরাণ রচিত করে এবং গণেশ নিজের অজান্তে চারটি বেদ ও আটারোটি পুরাণ লিপিবদ্ধ করে। এই গ্রন্থ রচনার পরে তাঁর নাম হয় কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস।
(যদি গণেশ ছলনা না করত তাহলে আজ আমরা গদ্য আকারে আমাদের সনাতনী শাস্ত্র গ্রন্থ ও পুরাণ পেতাম, আর গদ্য আকারে হলে আজ শাস্ত্র গ্রন্থ কেউ বিকৃতি করার সুযোগ পেতো না। হয়তো এখানে পরমেশ্বরের কোন লীলা ছিল বা আছে।)
বিঃদ্রঃ :- নিম্নউক্ত ছবিতে সংস্কৃত ভাষায় (মহাভারত কথা) লেখা আছে। কিন্তু অত্র জীবনকথা মহাভারতের মধ্যে শুধু ঋষি ব্যাসের জন্ম বৃত্তান্ত টি আছে বাকি সবগুলো নয়। যারা সংস্কৃত পড়তে পারেন তাদের মনে এই ধারণা আসতে পারে যে, আমি এই পূর্ণ জীবনটি মহাভারত থেকে উল্লেখ করেছি। এইজন্য প্রকাশ করলাম ।
卐জয় মা卐
ॐ জয়গুরু অদৈতানন্দ ॐ জয়গুরু পূর্ণানন্দ - জয় মা আদিশক্তি, শ্রী মাতা কৃপাহি কেবল

গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত ও প্রথম পূজিত ইতিহাস"

সংস্কৃত শিবপুরাণ মতে পঞ্চম অধ্যায়ে ঋষিকপিল দ্বারা মহাদেবের অভিশপ্ত পর্ব :-
সূর্যদেব তার জ্ঞানরঞ্জন হওয়ার অহংকারে দেবতাদের সাথে জ্ঞান তর্কে জড়িত হয়ে পড়ে। একসময়ে সেই তর্ক নিজেদের কার্যবিধির উপরে তর্ক বিতর্কেও শুরু হয়। সূর্যদেব দেবতাদের সাথে তর্কে জেতার জন্য নিজের শক্তি ক্ষমতা প্রদর্শন হেতু সূর্যদেব নিজেকে আলোকহীন করে পৃথিবীকে অন্ধকার করে বসে। ত্রিলোক অন্ধকার দেখে ব্রহ্মা বিষ্ণু উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। তারা উভয়েই চিন্তা করলো, এই সমস্যা সমাধান হেতু মহাদেব শরণাপন্ন হওয়া একান্তই প্রয়োজন, কেননা দেবতাদের দেবরুপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সয়ং মহাদেব নিজেই। অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু কৈলাসচন্দ্রের উদ্দেশ্য গমন করলেন। কৈলাসে মহাদেব দেখলেন ব্রহ্মা,বিষ্ণু উভয়েই উপস্থিত, তখন মহাদেব বললেন ব্রহ্মদেব, বিষ্ণুদেব আপনাদের আগমনের কারণ? ব্রহ্মদেব বললেন মহাদেব আপনি ত্রিকাল দর্শী শক্তিধর ও শক্তিপতি, হেন পরিস্থিতি আপনার অজ্ঞাত নয়। মহাদেব বললেন ত্রিলোক আলোকহীন যা শুধুমাত্র সূর্যদেবের অহঙ্কারের হট্টমালার কারণে। তখন ব্রহ্মদেব বললেন সূর্যদেবের হটের সমাধান না হলে সৃষ্টির সৃজনশীলতার ব্যাঘাত ঘটবে অতএব আপনি ব্যতীত হেন পরিস্থিতির সমাধান অসম্ভব। মহাদেব বললেন অত্র পরিস্থিতির সমাধান হেতু আমি সূর্যালোকে যাচ্ছি। অতঃপর মহাদেব সূর্যলোকে গমন করলেন। সূর্যলোকে গিয়ে মহাদেব সূর্যদেবকে বিভিন্ন প্রকারে সান্ত্বনা সরুপ বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু সূর্যদেব কিছুতেই মানতে নারাজ। শেষে মহাদেব সূর্যদেবকে বললেন, আপনাকে শক্তি প্রদান করা হয়েছে সৃষ্টির বিকাশের জন্য, সৃষ্টির সৃজনশীলতা কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে নয়। আপনি আপনার দায়িত্ব পালনের কাজে সামান্য একটি তর্ক বিতর্ক নিয়ে সৃষ্টির সৃজনশীলতার কাজে অন্যায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, ভুলে যাবেন না সৃষ্টিকে আলোকিত রাখা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। মহাদেব মুখে এই বাক্যে বচ্চন শুনে সূর্যদেব ক্রোধান্নিত হয়ে বললেন, মহাদেব আপনি আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটালে আমার ক্রোধান্নিত তেজশক্তি আপনাকে ধংস করতে পারে তাই অনুরোধ করছি আপনি সূর্যলোক হতে প্রস্থান করুন। সূর্যদেবের মুখের বাক্য বচ্চন শুনে মহাদেব ক্রোধান্নিত হইলেন, বললেন আপনার মধ্যে এত অহঙ্কার জন্মেছে আপনি আমাকে ধংস করার বাক্যে মুখান্নিত হইলেন। আপনার এই অহঙ্কার ধংস ব্যতীত আর কোন পথনির্দেশ আমার সামনে নেই। অতঃপর মহাদেব নিজের ত্রিশূল সূর্যদেবের উপর প্রহার করলেন এবং তত্ক্ষণাত্ সূর্যদেব ত্রিশূল আঘাতে প্রাণপাত হইলেন। অতঃপর সেই স্থানে সূর্যদেব পিতা ঋষিকপিল উপস্থিত হইলেন তিনি দেখলেন তার পুত্রের শব্ পরে আছে। সেই ক্ষণে ঋষিকপিল পুত্র শব্ নিয়ে কান্না করে। ঋষিকপিল বললেন মহাদেব এ আপনি কি করলেন? আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করলেন? মহাদেব বললেন অহঙ্কারের বশিভূত হয়ে আপনার পুত্র নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে গিয়েছিল আর আপনার পুত্রের অহঙ্কারের বিনাশ করাটা একান্তই প্রয়োজন ছিল। ঋষিকপিল মহাদেব মুখবাক্য শুনে মহাদেবকে বললো, আমি ঋষিকপিল আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি যেরকম আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করছেন একদিন আপনি নিজেই নিজের হাতে পুত্র হত্যার দ্বায়ী হবেন এ আমার অখণ্ড অভিশাপ। তারপর ঋষিকপিল আবার পুত্র শোকে শোকার্ত হয়েপড়ে অতঃপর মহাদেব বললেন ঋষিকপিল সরে দাঁড়ান। ঋষিকপিল দেখলেন মহাদেব সূর্যদেবের প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। প্রানান্নিত হয়ে সূর্যদেব বললেন, মহাদেব আমাকে ক্ষমা করুন আমি অহঙ্কার বশিভূত হয়ে নিজের নৈতিক দায়িত্ব ও দেবতার দেবধর্ম ভুলে গিয়েছিলাম। আমার কারণে সৃষ্টির সৃজনশীলতার কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে তাই আমি অনুশোচিত এবং আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার সহিত প্রণাম প্রদর্শন করছি যে আপনি আমাকে অহঙ্কার মুক্ত করেছেন। ধন্যবাদ মহাদেব আপনার শ্রীচরণে আমার কোটি কোটি প্রণাম। মহাদেব ঋষিকপিলকে বললেন আমি সূর্যদেবকে নয় সূর্যদেবের অহঙ্কারের হত্যা করেছিলাম যা অনিচ্ছুক বশত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। হেন সৃষ্টি বিকাশের জন্য আপনার অবদান কৃতিত্ব অনেক, হয়তো আমার স্থানে আপনিও তাই করতে বাধ্য হইতেন। আপনি কি চান আপনার গোত্রীয় মানবজাতি অন্ধকারে জীবন যাপন করুক। ঋষিকপিল নিজ পুত্রের মুখবাক্য শুনে বললো, মহাদেব আমি জ্ঞানী হয়ে পুত্র মোহে পূর্ণ ঘটনা বিবেচনা না করে নিজমুখে একি অভিশাপে আপনাকে অভিশপ্ত করলাম। যে অভিশাপ আমি সয়ং নিজে চাইলেও শিথিল করতে অক্ষম। মহাদেব বলেন ঋষিকপিল ভুলে যাবেন না ত্রিদেবের যেকোন কর্ম সৃষ্টির কল্যাণে। আপনি সৃষ্টি বিকাশের সপ্তঋষির একজন মহাত্মা আর একজন মহাত্মার মুখবাণী কখনও বিফল যাইনা। আজ আপনার দ্বারা অভিশপ্ত হওয়ার কারণ ভবিষ্যতে মানব কল্যাণ বয়ে আনবে। এতে আপনি অনুশোচিত হইবেন না, আপনার মুখমণ্ডল হইতে সেই অভিশাপই এসেছে যা ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হবে।
(শিবপুরাণ মতে ঋষিকপিল দ্বারা মহাদেবের অভিশপ্ত পর্ব সমাপ্ত)
সংস্কৃত শক্তিপুরাণের মতে দ্বিতীয়,তৃতীয়, ষষ্ঠ,অষ্টম, নবম ও দশম অধ্যায়ে :-
"মহাদেবের অন্তকালীন যোগ তপস্যা গমন,
আদিশক্তির দ্বারা মানব কল্যাণে সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্ম, মহাদেব দ্বারা গণেশের হত্যা ও পুনরায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা, গণেশের প্রথম পূজিত বর্ণনা পর্ব ":-
কার্তিক জন্মের পর থেকেই কৈলাশের বাইরে ছিল। দেবী পার্বতীর শত ইচ্ছা সত্তেও কার্তিককে কৈলাশে আনা সম্ভব ছিলোনা। এই নিয়ে মহাদেব পার্বতীর মধ্যে সবসময় তর্ক বিতর্ক হতো। একদিন দেবী পার্বতী মনস্থির করে নিয়েছেন যে আজ কার্তিককে কৈলাশে আনাবোই। মহাদেব তখন জ্ঞান কুন্ডে সপ্তঋষিদের জ্ঞান প্রদান সভায় উপস্থিত। দেবী পার্বতী জ্ঞান সভায় উপস্থিত হয়ে বললেন স্বামী আপনার নিকট কিছু আলাপ আছে। মহাদেব বললো, দেবী আমি জ্ঞান সভা শেষে আপনার নিকট আসবো আলাপচারিতা করবো। দেবী পার্বতী বললেন না, আমার এখন আপনার সাথে আলাপ করতে হবে। মহাদেব বললো দেবী আপনাকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেন? দেবী পার্বতী বললো আজ এখুনি আমি কার্তিককে আমার সান্নিধ্যে চাই? তখন জ্ঞান সভায় উপস্থিত ঋষি সান্ডুল্য বললেন, মাতা কার্তিকের জন্ম হয়েছে অসুরকে বধ করার জন্য যা মানব কল্যাণে ঐকার্যে তিনি এখনো অবস্থিত। মাতা চারিদিকে অসুরের ত্রাসে জর্জরিত শুধু মাত্র কার্তিকেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কারণ আপনার এবং মহাদেবের যোগতেজ দ্বারা জন্মিত কার্তিক ব্যতীত অন্য কোন শক্তি অসুরপতিদের বিনাশ করতে পারবেনা। কারণ অনেক অসুরপতি ত্রিদেবের বরদান প্রাপ্ত যা সয়ং ত্রিদেব চাইলেও বধ করতে পারবেনা। মাতা সৃষ্টির কল্যাণ হেতু কার্তিককে নিয়ে প্রভুর সাথে মতপার্থক্য তর্কে জর্জরিত হবেন না। কিন্তু দেবী পার্বতীর উপর ঋষির কথার কোন প্রভাব পড়লো না। এরপর একে একে ঋষি কপিল,ঋষি মুগুল্য ও অন্য ঋষিগণ বোঝালেন কিন্তু কাজ হলো না অতঃপর মহাদেব দেবী পার্বতীকে বোঝালেন তাতেও কাজ হলো না। দেবী পার্বতী তার কথায় অটল, এরপর দেবী পার্বতী ও মহাদেব তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পরলেন। তর্ক বিতর্ক এমন এক পর্যায় চলে গেলেন, মহাদেব পার্বতীর উপর ক্রোধান্নিত হয়ে গেলেন। দেবী পার্বতী বললেন যদি আজ আমি কৈলাস পুরীতে কার্তিককে না পায় তাহলে আমি কৈলাস ত্যাগ করবো। দেবী পার্বতীর মুখের বাক্য বচ্চন শুনে মহাদেবের ক্রোধ আপোসহীন হয়ে গেল অতঃপর মহাদেব বললো আমি আজ এক্ষুণি অন্তকালীন তপস্যায় যাচ্ছি (অন্তকালীন তপস্যা বলতে মহাদেবের ইন্দ্রিয় তপস্যা যে তপস্যায় মহাদেব মহাকাশ, পৃথিবী ও পাতাল হতে নিজেকে ভিন্ন করে ফেলেন অর্থাৎ এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড মহাদেব বিহীন হয়ে যাই)। এই বলে মহাদেব নিজেকে অন্তকালীন তপস্যার জন্য জ্ঞান সভা থেকে প্রস্থান করলেন। সপ্তঋষি গণের আকুতি মিনতি উপেক্ষা করে মহাদেব তপস্যায় লিপ্ত হইলেন। তখন দেবী পার্বতী মনমলিন হয়ে ফিরে যায়। এরপর মহাদেবের অন্তকালীন তপস্যার আঁসিবছর অতিবাহিত হয়েছিল,এদিকে অসুরের উৎপাত বেড়ে যায় এবং অসুরজাতি মানবজাতিকে মায়াচন্ন করে হিংস্ররূপে তৈরি করে। মহাদেব বিহীন সেই হিংস্র মানুষ ও মৃত্যুহীন হয়ে উঠে এমনকী দেবতারা নিঃসঙ্গ হয়েপড়ে। তখন দেবতা ও সপ্তঋষিগণ ব্রহ্মার শরণাপন্ন হয়, ব্রহ্মা দেবতা ও সপ্তষীদের নিয়ে বৈকুন্ঠে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়। ব্রহ্মা বলেন হে পালনহার সৃষ্টির এই পরিণতির কি সমাধান? বিষ্ণু উত্তরে বলেন আমি নিজেও উদ্বিগ্ন, মহাদেব অন্তকালীন আর আমরা কেউ মহাদেবকে ফিরিয়ে আনতে গেলে মহাদেবের রুদ্ররুপ সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে বিনাশ করবে। ব্রহ্মদেব বললেন তাহলে উপায়? শ্রী বিষ্ণু বললেন চলুন ব্রহ্মদেব আমরা দুইজন আদিশক্তির শরণাপন্ন হই?(আদিশক্তি যার কোন প্রকৃত রুপ,আকৃতি বা মূর্তি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে নেই যে নিরাকার। এমনকী কোন ঋষিও তপস্যা গুণে তাকে অর্জন করতে পারেনি এবং এই ত্রিদেবের জন্ম(অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহাদেব) সয়ং আদিশক্তি হতে। য়ার মাত্র দশ মহাবিদ্যা শক্তি ধারণ করেছেন মহাদেব সংহার কর্তা হওয়ার জন্য তাও মানবরুপে শত জন্ম গ্রহন করার পর, যাকে আমরা দেবী দূর্গা বলে জানি। এজন্য দেবী দূর্গাকে আদিশক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয় যার মধ্যে দশ মহাবিদ্যা স্থিত।)অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোকের উদ্দেশ্যে গমন করেন। (অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যদি আদিশক্তি নিরাকার হয় কোন মুনিঋষি আদিশক্তিকে ধ্যাণ যোগে অর্জন করতে না পারে তাহলে কিভাবে ব্যাসদেব বেদগ্রন্থে ও বিভিন্ন পুরাণে এই ত্বত্ত কথা লিপিবদ্ধ করলেন। যখন মহাদেব অন্তকালীন হইতে ফিরে আসেন তখন কৈলাসে শ্রী বিষ্ণু অন্তকালীন একশত বছরের তাণ্ডব ও গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। যদিও মহাদেব সব জানতেন।) তখন বৈকুণ্ঠে সপ্তঋষি ও দেবতারা অপেক্ষারীত। ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোকে গিয়ে উপস্থিত হইলেন,দুজনেই বললেন প্রণাম মাতা। আদিশক্তি প্রণাম গ্রহন করে বললেন, তোমাদের আগমন উদ্দেশ্য কি? মাতা আপনি সর্ব জ্ঞাত, সৃষ্টির সংকট নিরসনে আমরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। সৃষ্টির সংকট নিরসনের জন্য আমার শরণাপন্ন না হয়ে আমার স্থিতি দশমহাবিদ্যা পার্বতীর নিকট যাও। দেবী পার্বতীকে বলো সৃষ্টির সংকট নিরসনে সংকট মোচনের জন্ম আবির্ভাবের সময় এসেছে যা একান্তই প্রয়োজন। সমাধান পেয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোক হতে প্রস্থান করে বৈকুণ্ঠে গমন করেন, বৈকুণ্ঠ হতে সপ্তঋষি ও দেবতাদের নিয়ে কৈলাসের উদ্দেশ্যে গমন করেন। সেই সময় পার্বতী শিবলিং পুজায় মগ্ন ছিলেন। অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু ও অন্যান্য সবাই গিয়ে উপস্থিত। পার্বতী সবাই কে দেখে বললো আপনাদের কৈলাসে পদার্পণের কারণ? বিষ্ণুদেব বললেন দেবী সৃষ্টির সৃজনশীলতা সংকট নিরসনে আমরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি, পার্বতী বললেন, বলুন আপনাদের জন্য কি করতে পারি? দেবী সৃষ্টির সংকট মোচনের জন্য আপনাকে এক পুত্রের আবির্ভাব করতে হবে। পার্বতী বললো আপনারা জানেন মহাদেব অন্তকালীন তাহলে মহাদেব ব্যতীত পুত্রের আবির্ভাব কিভাবে সম্ভব? ব্রহ্মদেব বলেন দেবী আপনি আদিশক্তি সরুপ দশমহাবিদ্যা স্থিতি এবং সৃষ্টির প্রকৃতি, আমার বিশ্বাস আপনি চাইলে আমাদের সংকট নিরসন সম্ভব। দেবরা পুরুষ ও প্রকৃতি মিলে সৃষ্টি সম্ভব এখন জিনি পুরুষ তিনি অন্তকালীন শুধু প্রকৃতি কিভাবে সৃষ্টিসাধ্য করবে? বিষ্ণু বলেন আপনাকে কোন একটা উপায় খুঁজতে হবেই অন্যথা সৃষ্টি ধংস হয়ে যাবে। দেবী পার্বতী বললেন ঠিক আছে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তখন সবাই কৈলাস হতে প্রস্থান করলেন। অতঃপর দেবী পার্বতী শিবলিং পুজার ফুল বিসর্জন দিতে কৈলাসের সরোবরে গেলেন সরোবরের কাছে বসে চিন্তা করলেন, আমার এমন একটা পুত্রের জন্ম দিতে হবে যে সৃষ্টির কল্যাণ বয়ে আনবে এবং আমার অনুসারী হয়ে চলবে। তখন পার্বতী পুজোর ডালি থেকে চন্দন নিয়ে গায়ে মাখতে লাগলেন কিছুক্ষণ পরে সেই চন্দন ও গায়ের ময়লা সহ তুলতে লাগলেন। এইভাবে বেশ কয়েকবার গায়ের ময়লা চন্দন তুলে দেবী পার্বতী সেই মলয়চন্দন দিয়ে এক শিশুর মূর্তি তৈরি করলেন এবং সেই মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। যেহেতু গায়ের মল থেকে ঐ শিশুর জন্ম সেই শিশুর জ্ঞান বুদ্ধি মল জ্ঞান বুদ্ধি রুপে আবদ্ধ থাকে যা মাতৃ আদেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আচার্য হলেও এটা সত্য সে শিশুর আগমনে পৃথিবীতে অসুরেরা যে মানবজাতিকে মায়াচন্ন করেছিল তারা সবাই মায়ামুক্ত হয়ে উঠে। পার্বতী কুমারের বয়স যখন ছয়বছর তখন মহাদেবের অন্তকালীন শতবর্ষ পূর্ণ হয়। একদিন নন্দী সংবাদ নিয়ে আসে যে মহাদেব অন্তকালীন হতে প্রস্থান করবে এবং সরাসরি পার্বতীর সান্নিধ্যে আসবে। অতঃপর এই সংবাদ ত্রিলোক ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্রহ্মদেব ও দেবী সরস্বতী,বিষ্ণুদেব ও দেবী লক্ষ্মী, স্বর্গের সকল দেবতা ও অপ্সরী এবং সপ্তঋষিগণ কৈলাসে এসে উপস্থিত। সবাই দেখে দেবী পার্বতী অতি আনন্দিত, মুখে মহাদেব আগমনের প্রসন্নতা ফুটে উঠেছে। অতঃপর দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী পার্বতীর দুই সখী সহ পার্বতীকে স্নান কুন্ডে নিয়ে যায়, যাওয়ার সময় দেবী পার্বতী কুমারকে বলে পুত্র আমি স্নান কুন্ডে প্রবেশ করছি তুমি স্নান কুন্ডের প্রবেশ দ্বারে প্রহরায় থাকো দেখবে যাতে কেউ স্নান কুন্ডে প্রবেশ করতে না পারে। তার কিছুক্ষণ পড়ে মহাদেব কৈলাসে এসে হাজির হইলেন এবং মহাদেব নন্দীকে বললেন যাও তোমার মাতার কাছে সংবাদ পৌঁছাও আমি এসেছি। নন্দী গিয়ে সংবাদ পৌঁছাতে যাচ্ছিল পার্বতী কুমার বললো দাঁড়াও ভেতরে যেতে মাতার নিষেধ আছে, নন্দী বললেন কুমার তোমার পিতা মহাদেব এসেছেন সেই সংবাদ মাতার নিকট পৌঁছানোর আদেশ করেছেন আমার প্রভু। পার্বতী কুমার বললো এইযে প্রভুর আদেশ পালনকারী তোমার প্রভুকে গিয়ে বলো অপেক্ষা করতে। নন্দী গিয়ে মহাদেবকে বলে মহাদেব শুনে ক্রোধান্নিত হইলেন, তখন দেবতারা সবাই বললো ক্রোধ করবেন না প্রভু অবুঝ শিশু আমরা গিয়ে বোঝাচ্ছি। এক এক করে সব দেবতারা গিয়ে পার্বতী কুমারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এক পর্যায়ে দেবতারা ধৈর্যহীন হয়ে পার্বতী কুমারের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় কিন্তু তাতেও সবাই পরাস্ত হয়ে ফিরে আসে। সেইসব দেখে মহাদেবের ক্রোধা অগ্নি রুপ ধারণ করে। তখন মহাদেব নিজেই স্নান কুন্ডের সামনে যায়, পার্বতী কুমার বলে দাঁড়ান ভেতরে যেতে মাতার নিষেধ আছে। মহাদেব বললো পুত্র আমি তোমার পিতা, উত্তরে পার্বতী কুমার বললো প্রনিপাত পিতা। মহাদেব বললো পুত্র আমাকে স্নান কুন্ডের ভেতরে যেতে দাও, পার্বতী কুমার বললো আপনি আমার পিতা হতে পারেন কিন্তু আমার মাতার আদেশ কেউ যাতে স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। মহাদেব বললো পুত্র আমার ক্রোধের পরীক্ষা নিওনা, পার্বতী পুত্র বললো আপনার ক্রোধ আসলে কিআর হবে আপনার আগে অনেকেই এসেছিল সবাই পলায়ন করেছে। মহাদেব বললো পুত্র তোমাকে অন্তিম বার বলছি আমার পথ অবরুদ্ধ করিওনা সড়ে দাঁড়াও, পার্বতী পুত্র বলে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণেতো নয়। উপস্থিত সকল দেব, ঋষি, অপ্সরীগণ হতভম্ব হয়ে যায় সবাই বলতে লাগে মহাদেবের ক্রোধের প্রকোপ থেকে পার্বতী পুত্রকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। অতঃপর মহাদেব নিজের পুত্রের উপর ত্রিশূল প্রহার করে। ক্রোধের তেজের কারণে ত্রিশূল হইতে অগ্নি নির্বাহ হয়, ত্রিশূল গিয়ে পার্বতী কুমারের মস্তক ছিন্ন করে মাটিতে পড়ে যায় এবং তেজ অগ্নিতে মস্তক বিস্তীর্ণ হয়ে যায়। মস্তক খণ্ডিত হওয়ার আগে কুমার মা বলে চিৎকার করে উঠে, আর সেই ডাক শুনে পার্বতী স্নান কুন্ড থেকে বেরিয়ে আসে, এসে দেখে তাঁর পুত্রের মস্তক বিহীন শব্ প্রবেশ দ্বারের মুখে পড়ে আছে। পার্বতী বললো, কে এই হত্যা কার্য করেছে? মহাদেব বললো আমি। কেন? কারণ কুমার আমাকে স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা গ্রস্থ করেছিলো। পার্বতী বললো, এতে কুমারের দোষ কোথায় আমি কুমারকে আদেশ করেছিলাম যাতে কেউ স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তাই বলে একটি শিশুর উপর অস্ত্রের প্রহার করবেন এবং আপনারা সকল দেবতারা এসেছিলেন সৃষ্টির সংকট নিরসনের জন্য, আর যে আপনাদের সংকট মোচন করলো সেই শিশুটির উপরে অস্ত্র প্রহার করতে আপনাদের বিবেকে একটু লাগলোনা। মহাদেব বললো,পার্বতী তোমার গায়ের মল থেকে জন্ম নেওয়ার কারণে কুমারের জ্ঞান বুদ্ধি মলাণিত হয়েছিল, ভাল মন্দ গুরুজনের প্রতি ভক্তিমূলক ভাষার প্রদর্শন জ্ঞান তার মধ্যে নেই বললেই চলে। পার্বতী বললো, এইটা আমার পুত্র হত্যার কারণ হতে পারে না। আমি পার্বতী বলছি, আমি আমার পুত্রকে পূণজীবিত রুপে চাই? মহাদেব বললো, তা অসম্ভব কারণ কুমারের মস্তক বিস্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই যদি হয় তাহলে যে পুত্রের আবির্ভাব সৃষ্টির সংকট মোচনের জন্য করেছিলাম আজ সেই সৃষ্টি নিজের হাতেই বিনাশ করবো। এই বলে পার্বতী দশমহাবিদ্যা রুপ ধারণ করে দূর্গা রুপে নিজেকে বিশাল আকৃতিতে পরিণত করে এবং পৃথিবী বিনাশ কর্ম শুরু করে। সেইরুপ দেখে সমস্ত সৃষ্টি তরথর করে কাঁপতে থাকে। তখন বিষ্ণুদেব বলল, মহাদেব অতিশয় পার্বতী কুমারের প্রাণ পুনরায় প্রতিষ্ঠার যুক্তি খুজুন অন্যথা আজ সৃষ্টির বিনাশ নিশ্চিত, ভুলে যাবেন না দেবী পার্বতী আদিশক্তি সরুপ। তখন মহাদেব বললো, একমাত্র পথ হচ্ছে সূর্যাস্তের আগে পৃথিবীর যেকোনো প্রাণী জীব অথবা মানুষ যার মা দক্ষিণ মূখী ও সন্তান উত্তর মূখী নিদ্রায় সায়িত আছে সেই উত্তর মূখী সন্তানের মস্তক খণ্ডিত করে নিয়ে আসতে হবে, তাহলে দেবী পার্বতী পুত্রের প্রাণ পুন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ব্রহ্মদেব এই দায়িত্ব দেবরাজ ইন্দ্র ও পবণ দেবকে প্রদান করে। তারা দুইজন ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত দেখে একটি ঐরাবত মা দক্ষিণ মূখী ও তার ঐরাবত সন্তান উত্তর মূখী নিদ্রা যাপন করছে। অতঃপর দেবরাজ ইন্দ্র দেরি নাকরে শিশু ঐরাবতের মস্তক খণ্ডিত করে একটি বস্ত্র ডেকে কৈলাসে নিয়ে চলে আসে। যখন মহাদেব ঐ মস্তক হইতে বস্ত্র উৎথান করে সবাই হতভম্ব হয়ে উঠে, দেবরাজ ইন্দ্র বলে অনেক খোঁজার পরে এই প্রাণীটিকে পেয়েছি। সময়ের অভাবে আমি নিরুপায় প্রভু। ব্রহ্মদেব বলেন মহাদেব সময় শেষ ক্ষণে আপনি অতিশয় পার্বতী কুমারের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করুন। মহাদেব সেই ঐরাবত মস্তক দিয়ে পুত্রের প্রাণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে এবং পুত্র প্রানান্নিত হওয়ার সাথে সাথে যখন মা করে ডাক দিল তখন দেবী দূর্গার তাণ্ডব রুপ শিথিল করে পার্বতী রুপে স্থিত হয় এবং পুত্রকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। তখন পার্বতী বলে আমার পুত্রের এই রুপ আসা করিনি। অতঃপর সকল দেব দেবীগণ ও মহাদেব সয়ং নিজে বরধান প্রদান করে পার্বতী পুত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান ও শক্তিপতি করে তুলে। তখন দেবী পার্বতী বললো ঐরাবত মুখী হলেও এটা আমার সন্তান যে আমাকে মা বলে ডাকবে। এরপর বেশ কিছুদিন সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অসুরজাতির বিনাশ কার্য সমাপন করে কার্তিক কৈলাসে ফিরে আসে। তখন পার্বতী বলেন, আমার কৈলাস পুরী আজ পরিপূর্ণ হয়েছে আমার দুই পুত্র আমার সান্নিধ্য আজ কৈলাসে উৎসব উদযাপন করা হোক। কৈলাসে বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হয়, অত্র উৎসবে ব্রহ্মা,বিষ্ণু,স্বর্গ সভার সকল দেবতা, স্বর্গের অপ্সরী ও সপ্তঋষিগণ উপস্থিত হইলেন। তখন সভায় উপস্থিত সবার সামনে বিষ্ণুদেব বলেন, মহাদেব সিদ্ধিদাতাকে দৈবিক কর্মে নিয়োগ করে স্বর্গ সভায় স্থাপিত ও নাম করণ করার সময় এসে গেছে। মহাদেব বললো, হে বিষ্ণুদেব সৃষ্টির সৃজনশীলতা কাজের প্রত্যেক পদে দেবতাদের নিয়োগ পরিপূর্ণ তবে কৈলাসে গণের অধিপতি পদ শুন্য তাই আজ আমি কুমারকে কৈলাসের গণের ঈশ (অর্থাৎ ইষ্টপতি) হিসাবে নিয়োগ করলাম। যেহেতু কুমার কৈলাস গণের ঈশ হয়েছে তাই আজ হতে কুমারের নামকরণ করা হলো গণেশ। তত্ক্ষণাত্ বিষ্ণুদেব বললো, গণেশের জন্মে সৃষ্টির কার্যসাধিত হয়েছে তাই গণেশের পূর্ণ নাম হবে সিদ্ধিদাতা গণেশ। পূর্ণ নামকরণের পর সবাই সিদ্ধিদাতা গণেশের জয় জয় কার করতে লাগলো। বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন স্বর্গের রাজ সভায় অগ্নিদেব বললেন, যেহেতু মহাদেব পুত্র কার্তিক স্বর্গ তথা ত্রিলোককে অসুর অত্যাচারের হাত হতে সুরক্ষিত করেছে আমাদের প্রয়োজন কার্তিককে দেবরাজ হিসাবে ঘোষণা করার। দেবরাজ ইন্দ্র বলে এ কিভাবে সম্ভব, আমি দেবতাদের রাজা আর আমি থাকতে মহাদেব পুত্র দেব সিংহাসন অধিপতি হবে কেমন করে? তখন বরুণ দেব বলেন কার্তিকের অবদান ও কৃতিত্ব কি সেই অধিকার দেয়না? দেবরাজ ইন্দ্র বলেন এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের কোন প্রয়োজন নেই, এই সমস্যার সমাধান সয়ং মহাদেব করবে। পরদিন সকল দেবতারা কৈলাসে যায় মহাদেবের সামনে নিজ নিজ মতবাক্য উপস্থাপন করে, মহাদেব কিছু বলার আগে কার্তিক নিজেই বলে উঠে আমি যা করেছি তা আমার কর্তব্য অত্র কার্যে আমার কোন আধিপত্য লালসা ছিলনা তাই আমি দেব সিংহাসন চাইনা। মহাদেব বললো অতি সুন্দর পুত্র তোমার উদারতা দেখে আমি মুগ্ধ কৃত্তি করেছ কিন্তু কোন লোভ লালসা নেই। এদিকে দেবরাজ ইন্দ্র মনে মনে প্রসন্ন পথের কাটা নিজে থেকে সরে গেছে। স্বর্গের সিংহাসন সমস্যা সমাধান হলেও শুরু হয় প্রথম পূজিত ঘোষণা নিয়ে, কেননা স্বর্গের রাজ সভার বেশির ভাগ দেবতা কার্তিকের প্রশংসায় মুখরিত কারণ তারা দেবরাজ ইন্দ্রের কটাক্ষ মুখবাণীর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। প্রথম পূজিত ঘোষণা নিয়ে স্বর্গ সভায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়, সেই সংবাদ মহাদেবের নিকট পৌঁছালে মহাদেব ঘোষণা করে যে, যে দেবতা নিজের বাহন নিয়ে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সপ্তবার পরিক্রমা সর্ব প্রথম সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে সেই প্রথম পূজিত ঘোষিত বলে বিবেচিত হইবে। সবাই সেই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উত্তরায়ণের দ্বাবিংশ দিবসে প্রতিযোগিতার ফল্স্রুত দিন ধার্য করা হয়। উক্ত দিনে ত্রিদেব ও সর্ব সাধারণের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। প্রতিযোগিতায় সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব অংশ নেওয়ার কারণে পৃথিবী সম্পূর্ণ রুপে অন্ধকার হয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় গণেশ অংশ গ্রহন না করলে বিষ্ণুদেব বলেন, গণেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তোমার অধিকার তুমি অংশ গ্রহন কর ঐদেখ তোমার ভ্রাতা কার্তিকও অংশ গ্রহন করেছেন। তারপরও গণেশ ইচ্ছা প্রকাশ না করায় দেবী পার্বতী বলে পুত্র যাও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন কর, অতঃপর গণেশ বললো যো আদেশ মাতা। এরপর গণেশ তাঁর বাহন মূসককে আনতে কৈলাসের ভেতরে গেলে অন্ধকার জনিত কারণে মূসককে খুঁজে না পায়। তখন গণেশ চিন্তা করলো সামান্য প্রথম পূজা অধিকার অর্জনের জন্য আজ সমগ্র পৃথিবীটা আলোকহীন আগে আমি এই সৃষ্টি আলোকিত করি তারপর না হয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিব। গণেশ তখন এমন এক দিব্যজোতি প্রজলন করে যার আলোতে সমগ্র সৃষ্টি আলোকিত হয়ে যায়। অতঃপর গণেশ মূসককে নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন হেতু পদার্পণ করবে আবার চিন্তা করলো, একি যারা আমার সর্বাঙ্গে ব্রহ্মাণ্ড আমার মাতাপিতা তাদের প্রদক্ষিন না করে আমি এ কোন ব্রহ্মাণ্ডের প্রদক্ষিণে লিপ্ত হতে যাচ্ছি। তা বলে গণেশ মহাদেব ও পার্বতীর চতুর্ধারে করজোড় হাতে সপ্তবার প্রদক্ষিণ করে এবং প্রদক্ষিণ শেষে প্রণামী মন্ত্র পাঠ করে। সর্বশেষে যখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য গণেশ মূসককে নিয়ে কৈলাস থেকে বের হয় তখন দেখে কার্তিক প্রতিযোগিতা শেষ করে ফিরে আসেন, তা দেখে গণেশ মূসককে নিয়ে আবার কৈলাস সভায় ফিরে যায়। কার্তিককে দেখে কৈলাসের গণেরা জয় কার্তিকের জয় বলে জয়ধ্বনি করে, অতঃপর ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বলেন অবশেষে দেবতাদের এই মনমুগ্ধকর প্রতিযোগিতায় মহাদেব ও পার্বতী পুত্র বিজয়ী হলো। অতঃপর একে একে সব দেবতারা প্রতিযোগিতা শেষ করে কৈলাসের সভায় ফিরে আসেন। দেবী পার্বতী প্রফুল্ল মনে কার্তিককে বিজয়ী ঘোষণা করবে সেইক্ষণে বিষ্ণুদেব বলে মহাদেব কৈলাস নন্দন কার্তিককে বিজয়ী ঘোষণা করুন।উত্তরে মহাদেব বললো, বিজয়ী কৈলাস নন্দন হয়েছে সত্য কিন্তু সে কার্তিক নয় বিষ্ণুদেব। বিষ্ণুদেব বললো তাহলে কে? মহাদেব বললো গণেশ। কার্তিক প্রশ্ন করলো কিভাবে পিতা গণেশ তো প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন পর্যন্ত করেনি? তখন মহাদেব বললো কার্তিক, পুত্র তোমার ব্রহ্মাণ্ড কোনটি? উত্তরে কার্তিক বললো, আমার সর্বাঙ্গীণ ও সর্বাগ্র ব্রহ্মাণ্ড আমার মাতা ও আপনি আপনারা দুইজন, শুধু আমি কেন তথা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সব সন্তানের ব্রহ্মাণ্ড আগে মাতা পিতা। অতঃপর মহাদেব বললেন পুত্র তুমি সপ্তবার ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমা শেষ করার আগেই তোমার ছোট ভ্রাতা গণেশ তাঁর মাতা পিতাকে সপ্তবার পরিক্রমা সম্পূর্ণ করেছে, তাহলে তুমি বলো বিজয়ী কে? তখন কার্তিক বললো আমি মহাদেব পার্বতী পুত্র অত্র সভায় উপস্থিত সকল দেব, দেবী, মহর্ষি ও ত্রিদেবের কাছে গণেশ কে বিজয়ী ঘোষণা করার অনুমতি প্রার্থনা করছি। অত্র সভায় উপস্থিত সকলে সাধু সাধু ধ্বনি উচচারণ করলো। অতঃপর কার্তিক গণেশ কে বিজয়ী ঘোষণা করলো। এভাবে গণেশ বিজয় হয় এবং প্রথম পূজনীয় স্থান অর্জন করে। সেই দিনের পর থেকে সয়ং ত্রিদেবের পুজার আগে এবং সকল পুজার আগে গণেশ পুজা আবশ্যক ও বিধান রুপে স্থিত হয়। প্রথমে গণেশ পুজা ব্যতীত কোন পুজা ফল্স্রুত ও পরিপূর্ণ হয় না। প্রায় একলক্ষ বছর আগের সেই অর্জন তথা কৃত্তিকা সনাতনী সমাজ আজ পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী পালন করে যাচ্ছে।
এই গ্রন্থ ইতিহাসের কিছু কিছু অংশ শিবপুরাণের মধ্যে স্থিত আছে। আমি অতি সংক্ষেপে গণেশের জীবনী ঘটনাবলি তুলে ধরেছি। যদি কোন ব্যক্তির এই ঘটনার পূণাঙ্গ জীবনী বর্ণনা জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে শক্তিপুরাণ পড়বেন ও কিছু অংশ শিবপুরাণের মধ্যেও পাবেন। উপরোক্ত বর্ণনার আগে আমি পুরাণ গুলোর অধ্যায় উল্লেখ করেছি।
বিঃদ্রঃ :- আমি যা লিখেছি তা সংস্কৃত শক্তিপুরাণ ও শিবপুরাণের মতে। বাংলা সংকলিত কিছু কিছু পুরাণ গুলোতে বিকৃত করা হয়েছে যার সাথে আমার লিখার কিছু ঘটনা অন্য ধরনের পাবেন।
আমার প্রত্যেকটি পোষ্ট্টে একটি কথা উপস্থাপন করি এখনো করছি: আমি মোবাইলে পোষ্ট্ লিখি তাই আমার অনিচ্ছা বশত এখানে অনেক বানান ভুল আছে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা জ্ঞাপন করছি।
ॐ জয় মা ॐ
ॐ জয়গুরু অদৈতানন্দ, ॐ জয়গুরু পূর্ণানন্দ
ॐ জয় মা আদিশক্তি। শ্রী মাতা কৃপাহি কেবলম

রাধারাণী কে, কি তার অস্তিত্ব ও কৃতিত্ব। আসুন আজ যেনেনি।



রাধাকৃষ্ণ লীলা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব করেন - কেউ বলে রাধা নামে কেউ নেই, আবার কেউ বলে রাধারাণীর কাহিনী কাল্পনিক >তাহলে আসুন জেনে নিই।
রাধা নিয়ে সাধারণত দুইটি মন্তব্য ফেসবুকে আসে
(এক)- রাধার কোন জন্ম বৃত্তান্ত নেই
(দুই )- রাধা কাহিনী কাল্পনিক
উত্তর হলো:- রাধার ব্যাপারে জানতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে যেতে হবে ত্রেতাযুগে। আজ হতে দশহাজার আটশো বছর আগে ত্রেতাযুগে নাগলোকে নাগরাজের কন্যার নাম ছিল চন্দ্রসেনা,সেই চন্দ্রসেনা মনে প্রাণে ভালোবাসতেন দশরথ নন্দন রামকে, এমনকী সে রামকে তার প্রাণপতি মেনে নিয়ে ছিল। অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই পাতালপতি ছিলেন, দশানন রাবণ এই দুই ভাইকে পাতালে প্রতিষ্ঠিত করে ত্রিলোকে রাবণের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য। একদিন অহিরাবণ ও মহিরাবণ নাগলোকে আক্রমণ করে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করার জন্য এবং তারা নাগলোক জয় করে,তখন অহিরাবণ সেখানে চন্দ্রসেনাকে দেখে, আর চন্দ্রসেনার রুপে মোহিত হয়ে অহিরাবণ চন্দ্রসেনাকে হরণ করে পাতাল পুরীতে নিয়ে আসে, কিন্তু চন্দ্রসেনা পাতাল পুরীতেও রামের প্রেমের নামে মালা গলায় দিয়ে রামনাম জপ করে। তা দেখে অহিরাবণ বলে হরণকৃত নারীর পতি হলো হরণকারী অর্থাৎ আমি, কিন্তু চন্দ্রসেনা বলে আমার তণ মন ও ঈশ্বর একমাত্র প্রভু রাম। এমন সময় লংকা থেকে রাবণের বার্তা আসে আর অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই লংকার উদ্দেশ্য প্রস্থান করে। রাবণ এই দুই ভাইকে বলে সাগরের ওপারে রাম নামে এক ভিকারী লংকায় আসার চেষ্টায় আছে তোমরা গিয়ে তাদের কে বধ কর। অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই গিয়ে বানরের বেশে রাম ও লক্ষ্মণ কে অজ্ঞান করে পাতাল পুরীতে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখে পাতাল দেবীর মন্দিরে। তারা দুই ভাই মনস্থির করে যে আগামী পূর্ণিমাতে এইদুই জনকে পাতাল দেবীর কাছে বলি দিয়ে দেবী হইতে আরো শক্তি আহোরণ করবো। অন্য দিকে হনুমান ও অন্য সবাই দেখে যে প্রভুর কক্ষে প্রভু ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ নেই এবং কক্ষেই একটি পাতাল সুরংগ, অতঃপর হনুমান আর দেরি নাকরে সেই সুরংগ দিয়ে পাতালে প্রবেশ করে। হনুমান পাতাল পুরীতে এসে দেখে এক রমনী তার দাসীকে বলছে পাতাল দেবীর মন্দিরে গিয়ে রাম ও লক্ষ্মণকে অশুদ্ধ করার জন্য, যাতে পাতাল পতিরা কাল পূর্ণিমাই রাম ও লক্ষ্মণের বলি দিতে না পারে। হনুমান তখনই দাসীর পিছনে পিছনে গিয়ে প্রভু ও লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে । জ্ঞান ফিরে রাম বলেন অহিরাবণ ও মহিরাবণ এই দুই ভাইকে বধ ব্যতীত আমরা পাতাল পুরী থেকে যাওয়া অসম্ভব, হেনক্ষণে দুই পাতাল পতি এসে হাজির। তখন রাম যুদ্ধের আহ্বান করে, অহিরাবণ ও মহিরাবণ, রাম ও লক্ষ্মণের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পজ্জায় রাম একে একে পাঁচবার দুই ভাইকে বধ করে কিন্তু অতঃপর তারা জীবিত হয়ে যাই। হনুমান দেখে চিন্তা করে এরা কি অমর আর যদি নাহয় তাহলে এদের মৃত্যুর রহস্য কি?অতঃপর হনুমানের মনে পড়ল রমনীর কথা, তত্ক্ষণাত্ হনুমান প্রাসাদে গিয়ে চন্দ্রসেনাকে বলে মাতা, এইদুটি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি জানেন যদি জেনে থাকেন তাহলে বলেন? চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে হে জানি কিন্তু কেন বলবো তাতে আমার কি লাভ?হনুমান বলেন বলুন আপনার কি চাই?চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে তুমি তোমার প্রভুকে যুদ্ধ শেষে আমার কাছে নিয়ে আসবে। হনুমান প্রশ্ন করে কেন? চন্দ্রসেনা বলে আমি দীর্ঘকাল থেকে রামের নামের প্রতি মোহিত হয়ে উনাকে অর্জনের উদ্দেশ্যে আরাধনা করছি উনি আমার আরাধ্য। তখন হনুমান চিন্তা করলো প্রভুতো সীতাপতি, তাহলে এ কিভাবে সম্ভব? আর যদি সত্যি প্রকাশ করি তাহলে পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি তা জানা অসম্ভব হবে। অতএব হনুমান বললো ঠিক আছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি প্রভুকে নিয়ে আসবো এবার বলুন। তখন চন্দ্রসেনা বলে সঞ্জিবীনি ভ্রমর অমৃত এনে ওদের ক্ষতস্থানে দিলে ওরা প্রাণ ফিরে পাই,যদি ঐ সঞ্জিবীনি ভ্রমর কে রুখতে পারো তাহলে ওদের মৃত্যু হবে।হনুমান বুদ্ধি করে বললো, ঠিক আছে মাতা আমি আসি আর একটি কথা প্রভু আসলে যাতে প্রভুর কোন প্রকার অপমান না হয় তাহলে কিন্তু প্রভু চলে যাবে তখন আমায় কোন দোষ দিতে পারবেন না। অতঃপর হনুমান গিয়ে সঞ্জিবীনি ভ্রমরদের অমৃত নিয়ে আসার পথে ধরে হত্যা করতে লাগলো। ভ্রমর কর্তা বলে উঠে আমাদের কেন হত্যা করছেন? হনুমান বলেন দুই অসুর পাতাল পতির প্রাণ রক্ষা করছেন এইজন্য। তখন ভ্রমর বলে ঠিক আছে আমাদের হত্যা করিওনা আমরা আর ওদের(অহিরাবণ ও মহিরাবণ)প্রাণ রক্ষা করবো না, এবার আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দাও। হনুমান বলে ঠিক আছে কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ভ্রমর বলে কি প্রতিশ্রুতি? তোমরা চন্দ্রসেনার কক্ষে গিয়ে তার শয়ন সজ্জার কাঠ ঘোগলা করে দিতে হবে। ভ্রমর বলেন ঠিক আছে। এরপর অহিরাবণ ও মহিরাবণ মারা যায়। তখন রাম হনুমানকে বলে চলো যাওয়া যাক,হনুমান বলে না প্রভু আপনাকে চন্দ্রসেনার কক্ষে যেতে হবে কারণ আমি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য জানতে গিয়ে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আপনাকে তার কক্ষে নিয়ে যাবে। হনুমান রামকে বিস্তারিত ভাবে সব খুলে বলে। অতঃপর রাম চন্দ্রসেনার কক্ষে যাই। রামকে দেখে চন্দ্রসেনা রামের চরণে পুস্পাদি দিয়ে রামকে বলেন আসন গ্রহন করুন। রাম যখন চন্দ্রসেনার শয়নসজ্জায় বসে তখন শয়ন সজ্জা ভেঙে পড়ে, তত্ক্ষণাত্ রাম ক্রোধান্নিত হয়ে উঠে। অতঃপর চন্দ্রসেনা রামের পায়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর বলতে থাকে আমি আমার এই অসুচী দেহ আমার আরাধ্যকে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলাম আমার আরাধনা সব বৃথা। রাম তখন চন্দ্রসেনাকে তুলে বলে, দেবী আমি তোমার প্রেম ভক্তিতে প্রসন্ন আমার কোন ভক্তের আরাধনা বৃথা যায় না। কিন্তু এই জন্মে আমি তোমার ভক্তির প্রতিদান দিতে পারবোনা কারন আমি সীতাপতি, কিন্তু আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি দাপর যুগের লীলায় কৃষ্ণ হয়ে জন্ম নিবো আর তুমি রাধা নামে জন্ম নিবে আর সেই জন্মে আমি তোমার প্রেম ভক্তি আরাধনার প্রতিদান দিবো আর তোমার আমার সেই যুগলবন্দিকে মানবজাতি রাধাকৃষ্ণ যুগল বলে আখ্যায়িত করবে যা পৃথিবীর অন্তিম কাল পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকবে।
卐 এইটা হচ্ছে রাধারাণীর জন্ম বৃত্তান্ত যার উত্তর শ্রীমদ ভাগবতে নেই। উত্তরটি আছে রামায়ণ গ্রন্থে।卐
আমি অতি সংক্ষেপে লিখেছি কারণ পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিতে গেলে আমার আরেকটা রামায়ণ লিখতে হবে। যদি কারও পূণাঙ্গ বর্ণনা জানতে ইচ্ছে করে তাহলে রামায়ণের রামের পাতাল বিজয় অধ্যায় পড়ে দেখবেন।
এবার আসি দাপরযুগে, রাধাকৃষ্ণনের লীলা সবাই জানে সম্পূর্ণ কৃতী কথা ও কৃতিত্ব সবার মুখস্থ, তাই নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। রাধারাণীর কাহিনী যারা কাল্পনিক বলে তাদের জন্য কিছু প্রমান দিতে পারি। যেমন :- (1)শ্রীমদ ভাগবতের দশম স্কন্ধের আটত্রিশ তম অধ্যায় যা সম্পূর্ণ (রাধা হতে বিদায় ও রাধার বিরহ বিলাপ) (2)রাধা অষ্টমী অধ্যায় (3)রাধার মান ভঞ্জন (4) নৌকা বিলাস ও এছাড়া কিছু কিছু অংশে রাধাকৃষ্ণনের লীলা কথা উল্লেখ আছে।
卐রাধা কাহিনী যে কাল্পনিক আসা করি আমি সেটা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি卐
আমি এখানে যে অধ্যায় ও স্কন্ধের নাম উল্লেখ করেছি তা আপনারা সংস্কৃত ভাগবতে ও বাংলা সংকলিত ভাগবতে পাবেন। প্রয়োজনে পড়ে দেখবেন রাধাকৃষ্ণনের জীবন লীলার প্রমাণ হাতেনাতে পাবেন।
বিঃদ্রঃ :- এখানে অনেক বানান ভুল হতে পারে মোবাইলে পরিপূর্ণতা পাচ্ছি না।
"ধন্যবাদ"
"ॐজয় গুরু অদৈতনন্দ,ॐজয় গুরু পূর্ণানন্দ"
"জয় মাতা আদিশক্তি,শ্রীশক্তি কৃপাহি কেবলম"

—কৃষ্ণের বিবাহ



কৃষ্ণের প্রথম ভার্যা রুক্সিণী। ইনি বিদর্ভরাজ্যের অধিপতি ভীষ্মকের কন্যা। তিনি অতিশয় রূপবতী এবং গুণবতী শুনিয়া কৃষ্ণ ভীষ্মকের নিকট রুক্সিণীকে বিবাহার্থ প্রার্থনা করিয়াছিলেন। রুক্সিণীও কৃষ্ণের অনুরক্তা হইয়াছিলেন। কিন্তু ভীষ্মক কৃষ্ণশত্রু জরাসন্ধের পরামর্শে রুক্সিণীকে কৃষ্ণে সমর্পণ করিতে অসম্মত হইলেন। তিনি কৃষ্ণদ্বেষক শিশুপালের সঙ্গে রুক্সিণীর বিবাহ স্থির করিয়া দিনাবধারণপূর্বক সমস্ত রাজগণকে নিমন্ত্রণ করিলেন। যাদবগণের নিমন্ত্রণ হইল না। কৃষ্ণ স্থির করিলেন, যাদবদিগকে সঙ্গে লইয়া ভীষ্মকের রাজধানীতে যাইবেন এবং রুক্সিণীকে তাঁহার বন্ধুবর্গের অসম্মতিতেও গ্রহণ করিয়া বিবাহ করিবেন।
কৃষ্ণ তাহাই করিলেন। বিবাহের দিন রুক্সিণী দেবারাধনা করিয়া দেবমন্দির হইতে বাহির হইলে পর, কৃষ্ণ তাঁহাকে লইয়া রথে তুলিলেন। ভীষ্মক ও তাঁহার পুত্রগণ এবং জরাসন্ধ প্রভৃতি ভীষ্মকের মিত্ররাজগণ কৃষ্ণের আগমনসংবাদ শুনিয়াই এইরূপ একটা কাণ্ড উপস্থিত হইবে বুঝিয়াছিলেন। অতএব তাঁহারা প্রস্তুত ছিলেন। সৈন্য লইয়া সকলে কৃষ্ণের পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন। কিন্তু কেহই কৃষ্ণকে ও যাদবগণকে পরাভূত করিতে পারিলেন না। কৃষ্ণ রুক্সিণীকে দ্বারকায় লইয়া গিয়া যথাশাস্ত্র বিবাহ করিলেন।
ইহাকে ‘হরণ’ বলে। হরণ অর্থে কন্যার প্রতি কোনরূপ অত্যাচার বুঝায় না। কন্যার যদি পাত্র অভিমত হয়, এবং সে বিবাহে সে সম্মত থাকে, তবে তাহার প্রতি কি অত্যাচার? রুক্সিণী-হরণেও সে দোষ ঘটে নাই, কেন না, রুক্মিণী কৃষ্ণে অনুরক্তা, এবং পরে দেখাইব যে, কৃষ্ণানুমোদিত অর্জুনকৃত সুভদ্রাহরণেও সে দোষ ঘটে নাই। তবে এরূপ কন্যাহরণে কোন প্রকার দোষ আছে কি না, তাহার বিশেষ বিচার আবশ্যক, এ কথা আমরা স্বীকার করি। আমরা সে বিচার সুভদ্রাহরণের সময় করিব। কে না, কৃষ্ণ নিজেই সে বিচার সেই সময় করিয়াছেন। অতএব এক্ষণে সে বিষয়ে কোন কথা বলিব না।
তবে ইহার ভিতর আর একটা কথা আছে। সে কালে ক্ষত্রিয়রাজগণের বিবাহের দুইটি পদ্ধতি প্রশস্ত ছিল;—এক স্বয়ংবর বিবাহ, আর এক হরণ। কখনও কখনও এক বিবাহে দুই রকম ঘটিয়া যাইত, যথা—কাশিরাজকন্যা অম্বিকাদির বিবাহে। ঐ বিবাহে স্বয়ংবর হয়। কিন্তু আদর্শ ক্ষত্রিয় দেবব্রত ভীষ্ম, স্বয়ংবর না মানিয়া, তিনটি কন্যাই কাড়িয়া লইয়া গেলেন। আর কন্যার স্বয়ংবরই হউক, আর হরণই হউক, কন্যা একজন লাভ করিলে, উদ্ধতস্বভাব রণপ্রিয় ক্ষত্রিয়গণ একটা যুদ্ধবিগ্রহ উপস্থিত করিতেন। ইতিহাসে দ্রৌপদীস্বয়ংবরে এবং কাব্যে ইন্দুমতীস্বয়ংবরে দেখিতে পাই যে, কন্যা হৃতা হয় নাই, তথাপি যুদ্ধ উপস্থিত। মহাভারতের মৌলিক অংশে রুক্মিণী যে হৃতা হইয়াছিলেন, এমন কথাটা পাওয়া যায় না।
শিশুপালবধ-পর্বাধ্যায়ে কৃষ্ণ বলিতেছেন:—
রুক্মিণ্যামস্য মূঢ়স্য প্রার্থনাসীন্মুমূর্ষতঃ।
ন চ তাং প্রাপ্তবান্ মূঢ়ঃশূদ্রো বেদশ্রুতীমিব||
শিশুপালবধপর্বাধ্যায়ে, ৪৫ অঃ, ১৫ শ্লোকঃ।
শিশুপাল উত্তর করিলেন:—
মৎপূর্বাং রুক্মিণীং কৃষ্ণ সংসৎসু পরিকীর্তয়ন্।
বিশেষতঃ পার্থিবেষু ব্রীড়াং ন কুরুষে কথম্ ||
মন্যমানো হি কঃ সৎসু পুরুষঃ পরিকীর্তয়েৎ।
অন্যপূর্বাং স্ত্রিয়ং জাতু ত্বদন্যো মধুসূদন ||
শিশুপালবধপর্বাধ্যায়ে, ৪৫ অঃ, ১৮-১৯ শ্লোকঃ।
ইহাতে এমন কিছুই নাই যে, তাহা হইতে বুঝিতে পারিব যে, রুক্সিণী হৃতা হইয়াছিলেন, বা তজ্জন্য কোন যুদ্ধ হইয়াছিল। তার পর উদ্যোগপর্বে আর এক স্থানে আছে,—
যো রুক্মিণীমেকরথেণ ভোজান্ উৎসাদ্য রাজ্ঞঃ সমরে প্রসহ্য।
উবাহ ভার্যাং যশসা জ্বলন্তীং যস্যাং জজ্ঞে রৌক্মিণেয়ো মহাত্মা||
ইহাতে যুদ্ধের কথা আছে, কিন্তু হরণের কথা নাই।
আর এক স্থানে রুক্মিণীহরণবৃত্তান্ত আছে। উদ্যোগপর্বে সৈন্যনির্যাণ সময়ে রুক্মিণীর ভ্রাতা রুক্মী পাণ্ডবদিগের শিবিরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তদুপলক্ষে কথিত হইতেছে:—
“বাহুবলগর্বিত রুক্মী পূর্বে ধীমান্ বাসুদেবের রুক্মিণীহরণ সহ্য করিতে না পারিয়া, ‘আমি কৃষ্ণকে বিনষ্ট না করিয়া কদাচ প্রতিনিবৃত্ত হইব না’, এইরূপ প্রতিজ্ঞাপূর্বক প্রবৃদ্ধ ভাগীরথীর ন্যায় বেগবতী বিচিত্র আয়ুধধারিণী চতুরঙ্গিণী সেনা সমভিব্যাহারে তাঁহার প্রতি ধাবমান হইয়াছিলেন। পরে তাঁহার সন্নিহিত হইবামাত্র পরাজিত ও লজ্জিত হইয়া প্রতিগমন করিলেন। কিন্তু যে স্থানে বাসুদেবকর্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন, তথায় ভোজকট নামক প্রভূত সৈন্য ও গজবাজিসম্পন্ন সুবিখ্যাত এক নগর সংস্থাপন করিয়াছিলেন। এক্ষণে সেই নগর হইতে ভোজরাজ রুক্মী এক অক্ষৌহিণী সেনা সমভিব্যাহারে সত্বরে পাণ্ডবগণের নিকট আগমন করিলেন এবং পাণ্ডবগণের অজ্ঞাতসারে কৃষ্ণের প্রিয়ানুষ্ঠান করিবার নিমিত্ত কবচ, ধনু, তলবার, খড়্গ ও শরাসন ধারণ করিয়া আদিত্যসঙ্কাশ ধ্বজের সহিত পাণ্ডবসৈন্যমণ্ডলী মধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন।”
এই কথা উদ্যোগপর্বে ১৫৭শ অধ্যায়ে আছে। ঐ অধ্যায়ের নাম রুক্মিপ্রত্যাখ্যান। মহাভারতের যে পর্বসংগ্রহাধ্যায়ের কথা পূর্বে বলিয়াছি, তাহাতে লিখিত আছে যে, উদ্যোগপর্বে ১৮৬ অধ্যায়, এবং ৬৬৯৮ শ্লোক আছে।
“উদ্যোগপর্বনির্দিষ্টং সন্ধিবিগ্রহমিশ্রিতম্।
অধ্যায়ানাং শতং প্রোক্তং ষড়শীতির্মর্ষিণা ||
শ্লোকানাং ষট্‌সহস্রাণি তাবন্ত্যেব শতানি চ।
শ্লোকাশ্চ নবতিঃ প্রোক্তাস্তথৈবাষ্টৌ মহাত্মনা ||”
মহাভারতম্, আদিপর্ব।
এক্ষণে মহাভারতে ১৯৭ অধ্যায় পাওয়া যায়। অতএব ১১ অধ্যায় পর্বসংগ্রহাধ্যায় সঙ্কলিত হওয়ার পরে প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে। এক্ষণে উদ্যোগপর্বে ৭৬৫৭ শ্লোক পাওয়া যায়। অতএব প্রায় এক হাজার শ্লোক প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে। প্রক্ষিপ্ত এই একাদশ অধ্যায় ও সহস্র শ্লোক কোন্‌গুলি? প্রথমেই দেখিতে হয় যে, উগ্যোগপর্বান্তর্গত কোন্ বৃত্তান্তগুলি পর্বসংগ্রহাধ্যায়ে ধৃত হয় নাই। এই রুক্মিসমাগম বা রুক্মিপ্রত্যাখ্যান পর্বসংগ্রহাধ্যায়ে ধৃত হয় নাই। অতএব ঐ ১৫৭ অধ্যায় প্রক্ষিপ্ত একাদশ অধ্যায়ের মধ্যে একটি, ইহা বিচারসঙ্গত। এই রুক্মিপ্রত্যাখ্যান পর্বাধ্যায়ের সঙ্গে মহাভারতের কোন সম্বন্ধ নাই। রুক্মী সসৈন্যে আসিলেন এবং অর্জুন কর্তৃক পরিত্যক্ত হইলেন, পশ্চাৎ দুর্যোধন কর্তৃকও পরিত্যক্ত হইলেন, পশ্চাৎ স্বস্থানে চলিয়া গেলেন, ইহা ভিন্ন মহাভারতের সঙ্গে তাঁহার আর কোন সম্বন্ধ নাই। এই দুইটি লক্ষণ একত্রিত করিয়া বিচার করিয়া দেখিলে, অবশ্য বুঝিতে হইবে যে, ১৫৭ অধ্যায় প্রক্ষিপ্ত, কাজেই রুক্মিণীহরণ বৃত্তান্ত মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত। ইহার অন্যতর প্রমাণ এই যে, বিষ্ণুপুরাণে আছে যে, মহাভারতের যুদ্ধের পূর্বেই রুক্মী বলরাম কর্তৃক অক্ষক্রীড়াজনিত বিবাদে নিহত হইয়াছিলেন। রুক্মিণীকে শিশুপাল কামনা করিয়াছিলেন, ইহা সত্য এবং তিনি রুক্মিণীকে বিবাহ করিতে পান নাই—কৃষ্ণ তাঁহাকে বিবাহ করিয়াছিলেন, ইহাও সত্য। বিবাহের পর একটা যুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু ‘হরণ’ কথাটা মৌলিক মহাভারতে কোথাও নাই। হরিবংশে ও পুরাণে আছে।
শিশুপাল ভীষ্মকে তিরস্কারের সময় কাশিরাজের কন্যাহরণ জন্য তাঁহাকে গালি দিয়াছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণকে তিরস্কারের সময় রুক্মিণীহরণের কোন কথাও তুলেন নাই। অতএব বোধ হয় না যে, রুক্মিণী হৃতা হইয়াছিলেন। পূর্বোদ্ধৃত কথোপকথনে ইহাই সত্য বোধ হয় যে, শিশুপাল রুক্মিণীকে প্রার্থনা করিয়াছিলেন, কিন্তু ভীষ্মক রুক্মিণীকে কৃষ্ণকেই সম্প্রদান করিয়াছিলেন। তার পর তাঁহার পুত্র রুক্মী শিশুপালের পক্ষ হইয়া বিবাদ উপস্থিত করিয়াছিলেন। রুক্মী অতিশয় কলহপ্রিয় ছিলেন। অনিরুদ্ধের বিবাহকালে দ্যূতোপলক্ষে বলরামের সঙ্গে কলহ উপস্থিত করিয়া নিজেই নিহত হইয়াছিলেন।..........

পৃথিবীর অনেক মানুষই বিশ্বাস করে:



পৃথিবীর অনেক মানুষই বিশ্বাস করে:
-ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ,দয়াবান,ত্রুটিহীন
-এটাই আমাদের প্রথম এবং শেষ জীবন
- ঈশ্বর এখানে আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন
- পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা স্বর্গে অথবা নরকে যাব
জীবনটা হচ্ছে পরীক্ষা,সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ পরীক্ষক,এবং ফলাফল যদি পাস হয়(স্বর্গ) আর ফেল(নরক)
চলুন কিছু উদাহরনের মাধ্যমে এই প্রাথমিক ভিত্তিটা সমালোচনার আধারে মূল্যায়ন করে দেখি যে এগুলো কতটুকু যুক্তিসংগত
১.
অনেক শিশুই মাতৃগর্ভে মারা যায়,তারা কি স্বর্গে অথবা নরকে যায়?অনেকেই বলে যে তারা স্বর্গে যায় কারন তারা তাদের জীবনে কোন ভুল করে নি।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে ’’তাদের কি জীবনে ভুল করার কোন সুযোগ ছিল?’’
সৃষ্টিকর্তাকি এখানে একজনকে মুক্ত করে তার পক্ষপাতিত্ত করছেন না যেখানে তার পরীক্ষাও শুরু হয়নি অপরদিকে অরেকজনকে ১০০ বছর ধরে পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিতে হবে।
২.
অনেক শিশুই সঠিকভাবে পরিপক্ক(Mature) হওয়ার আগে অল্প বয়সেই মারা যায়। এমনকি তারা যদি কোন ভুল কাজও করে থাকে তবে সেটা তারা নিজেদের ইচ্ছায় নয় বরং না জেনে ভাল মন্দের বিচার না বুঝে অজ্ঞানতার খাতিরে করেছে। তারা কি স্বর্গে অথবা নরকে যায়?
যদি তারা স্বর্গে যায় তবে ’’কেন সৃষ্টিকর্তা সবাইকে বাল্যবয়সেই হত্যা করে প্রত্যেকের জন্য স্বর্গে স্হান নিশ্চিত করছেন না? সৃষ্টিকর্তাকি তাহলে অন্যায়কারী এবং ত্রুটিপূর্ণ নয়?
যদি তারা নরকে যায় তাহলে তাদের দোষটা কোথায়?
ধরি দুটো জমজ বাচ্চা জন্মগ্রহন করলো। দুজনই ৩ বছর নিষ্পাপ জীবনযাপন করলো। তারপর একজন মারা গেল। সে সরাসরি স্বর্গে চলে গেল আর অপরজন কয়েকবছর নিষ্পাপ জীবনযাপন করলো,তারপর খারাপ কাজে লিপ্ত হল এবং ৬০ বছর বয়সে মারা গেল। এখন স্বাভাভিক ভাবেই সে নরকে যাবে কারন সৃষ্টিকর্তা তার পরীক্ষা নিয়েছেন আর অপর ভাইকে নেননি কারন তিনি তাকে বাল্যকালেই মেরে ফেলেছেন..
সৃষ্টিকর্তাকি এখনে অপরাধী নন কারন তিনি এক ভাইকে ৬০ বছর জীবিত রেখেছেন আর অপর ভাইকে নয়?যদি তিনি দুজনকেই ৩ বছর বয়সে মেরে ফেলতেন তাহলে দুজনই স্বর্গে যেত।
তাহলে জীবন যদি একটাই হয় এবং স্বর্গ-নরক বলে যদি নির্দিষ্ট কোন স্হান থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা অন্যায়কারী।
৩.
একজন মানুষ পাগল হয়ে জন্মালো। ৫ বছর পর্যন্ত তার মানসিক অবস্হার কোন উন্নতি হল না কিন্তু সে দীর্ঘজীবন বাঁচল তাহলে কি সে স্বর্গে অথবা নরকে যাবে?
আবারও উপরের একই প্রশ্নই উঠে এবং ফলাফল এই দাড়ায় যে হয় সৃষ্টিকর্তা অন্যায়কারী অথবা এক জীবন ও স্বর্গ নরকের ধারনাটা ভুল।
৪.
বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন স্হনে জন্মগ্রহন করে এবং পালিত হয় ও তাদের ধর্মও ভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু প্রত্যেক ধর্ম বলে যে একমাত্র তাদের ধর্মের মানুষই স্বর্গে যাবে অন্যরা নির্বিশেষে তাদের কৃতকর্মের জন্য নরকে যাবে।
তো কারা কোথায় যাবে?
আমার কি দোষ যদি আমি অন্য ধর্মে জন্মগ্রহন করে বেড়ে উঠি। সৃষ্টিকর্তা আগে থেকেই কেন আমার জন্য নরকে স্হান ঠিক করে রেখেছেন?
৫.
মানুষ বলে যে শিশুরা নিষ্পাপ তাই তারা যদি অল্প বয়সে মারা যায় তাহলে স্বর্গে যাবে। ধরি কেউ এই ব্যাপারটা খুব গুরুত্তের সাথে নিয়ে সিধান্ত নিল যে সমস্ত শিশুকে স্বর্গে প্রেরন করবে। একটা মহৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করে সে সব শিশুকে হত্যা করতে লাগল তার যুক্তি হচ্ছে- আমি সারাজীবন নরকের আগুনে পুড়তে রাজি কিন্তু আমি নিশ্চিত করে সমস্ত শিশুর জন্য স্বর্গে একটা স্হান সংরক্ষন করতে চাই!
সে তো নিঃশ্বার্থভাবে সমাজসেবা করছে। সে কি স্বর্গে অথবা নরকে যাবে?
যদি সে স্বর্গে যায় তাহলে সৃষ্টিকর্তা মানুষের অনুসরনীয় ভুল উদাহরন তৈরী করছেন।
যদি সে নরকে যায় তাহলে নিঃশ্বার্থ হওয়াটা খারাপ।
অধিকতর,শেষ বিচারের দিনের আগে কেউ আসলে জানবে না যে কে কোথায় যাবে,তার মানে সৃষ্টিকর্তা বহু নিষ্পাপ সমাজসেবীদের শিশু হত্যার বিষয় অনুসরন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর পরিস্হিতির মধ্যে ফেলেছেন!
পারিপার্শিক অবস্হা নিরপেক্ষ মূল্যায়নে এটাই দাবী করে যে
-প্রথমত সমস্ত বিষয়টা সবাইকে একই সুবিধা এবং মনোযোগ দিয়ে শেখাতে হবে এবং তাও হবে একই পরিস্হিতির অন্তর্ভক্ত,
-তারপর সেগুলোকে একই পারিপার্শিক অবস্হার ছত্রছায়ায় মূল্যায়ণ করতে হবে।
এই অনুসারে,সৃষ্টিকর্তার অবশ্যই প্রকৃত ধর্ম এবং তার গ্রন্হসমূহ প্রত্যেক মানুষের üদয়ে প্রতিস্হাপন করাতে হবে,তারপর প্রত্যেককে একই ধরনের পরিবারে জন্মগ্রহন করাতে হবে,তাদেরকে একই ধরনের স্হান এবং পরিবেশে বেড়ে উঠতে দিতে হবে এবং তারপরেই শুধুমাত্র পরীক্ষার ব্যবস্হা করতে হবে। (চলবে)

শ্রীকৃষ্ণ গীতায় যে ধর্ম প্রচারিত করিয়াছেন





শ্রীকৃষ্ণ গীতায় যে ধর্ম প্রচারিত করিয়াছেন, তাহাতে তৎকালে প্রবল কাম্যকর্মপরায়ণ যে বৈদিক ধর্ম, তাহার নিন্দাবাদ আছে। কিন্তু তাই বলিয়া তিনি বেদপরায়ণ ব্রাহ্মণগণকে কখনও অবমাননা করিতেন না। তিনি আদর্শ মনুষ্য, এই জন্য তৎকালে ব্রাহ্মণদিগের প্রতি যে ব্যবহার উচিত ছিল, তিনি তাহাই করিতেন। তখনকার ব্রাহ্মণেরা বিদ্বান্, জ্ঞানবান্, ধর্মাত্মা, এবং অস্বার্থপর হইয়া সমাজের মঙ্গলসাধনে নিরত ছিলেন, এজন্য অন্য বর্ণের নিকট, পূজা তাঁহাদের ন্যায্য প্রাপ্য। কৃষ্ণও সেই জন্য তাঁহাদিগকে উপযুক্তরূপ পূজা করিতেন। উদাহরণস্বরূপ, পথিমধ্যে ঋষিগণের সমাগমের বর্ণনা উদ্ধৃত করিতেছি।
“মহাবাহু কেশব এইরূপে কিয়দ্দূর গমন করিয়া পথের উভয় পার্শ্বে ব্রহ্মতেজে জাজ্বল্যমান কতিপয় মহর্ষিরে সন্দর্শন করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে দেখিবামাত্র অতিমাত্র ব্যগ্রতাসহকারে রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া অভিবাদনপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, হে মহর্ষিগণ‌! সমুদায় লোকের কুশল? ধর্ম উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত হইতেছে? ক্ষত্রিয়াদি বর্ণত্রয় ব্রাহ্মণগণের শাসনে অবস্থান করিতেছে? আপনারা কোথায় সিদ্ধ হইয়াছেন? কোথায় যাইতে বাসনা করিতেছেন? আপনাদের প্রয়োজন কি? আমারে আপনাদের কোন্ কার্য অনুষ্ঠান করিতে হইবে? এবং আপনারা কি নিমিত্ত ধরণীতলে অবতীর্ণ হইয়াছেন? “তখন মহাভাগ জামদগ্ন্য কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, হে মধুসূদন! আমাদের মধ্যে কেহ কেহ দেবর্ষি, কেহ কেহ বহুশ্রুত ব্রাহ্মণ, কেহ কেহ রাজর্ষি এবং কেহ কেহ তপস্বী। আমরা অনেক বার দেবাসুরের সমাগম দেখিয়াছি; এক্ষণে সমুদায় ক্ষত্রিয়, সভাসদ্ ভূপতি ও আপনারে অবলোকন করিবার বাসনায় গমন করিতেছি। আমরা কৌরবসভামধ্যে আপনার মুখবিনির্গত ধর্মার্থযুক্ত বাক্য শ্রবণ করিতে অভিলাষী হইয়াছি। হে যাদবশ্রেষ্ঠ! ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর প্রভৃতি মহাত্মাগণ এবং আপনি যে সত্য ও হিতকর বাক্য কহিবেন, আমরা সেই সকল বাক্য শ্রবণে নিতান্ত কৌতূহলাক্রান্ত হইয়াছি।